শম্পালী মৌলিক: একদিনে তিনটি বড় ছবির মুক্তি। হল দখলে সলমন খান একাই একশো। এ তো জানাই ছিল। সামনে পড়লেন দুই টলিউড হার্টথ্রব দেব এবং জিৎ। তাঁরা হলদখলে পিছিয়ে তো কী, মন দখল করে নিলেন দেব। এবং অবশ্যই রুক্মিণী মৈত্রও। কারা যেন বলেছিল, চ্যাম্প-এর বানানের অতিরিক্ত ‘A’ আসলে, ‘P’-এর পর বসবে। অর্থাৎ ওটা হবে CHAMPA বা চম্পা। তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিল দেব-রুক্মিণী জুটি। এ ছবির অন্যতম ইউএসপি তাঁদের অনবদ্য রসায়ন।
[ পাপ করেছে আম্বানি পরিবার! বিস্ফোরক দাবি রাখি সাওয়ান্তের ]
বক্সিং কেন্দ্রিক ছবি। পারিবারিক প্রেক্ষাপট। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আবেগ এবং হার্ডকোর বক্সিংয়ের মিশ্রণটা দারুণ করেছেন। গল্প দেবের, প্রযোজকও তিনিই। চিত্রনাট্য পদ্মনাভ দাশগুপ্তর। সব মানুষের স্বপ্ন ছোঁয়ার উড়ান চ্যাম্প-এর জমি তৈরি করেছে। ফলে সমস্ত দর্শক কানেক্ট করতে পারবেন নিজের সঙ্গে। আর সিনেমা যখন, সবটুকু বাস্তবসম্মত হতে হবে, তার তো কোনও বাধ্যতা নেই। এ গল্প গ্রামের ছেলে শিবাজির বড় হওয়ার, বক্সিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। গ্রাম থেকে তাকে খুঁজে আনে কোচ চিরঞ্জিত (বুড়োদা)। তাঁর তত্ত্বাবধানে চলে ট্রেনিং। কলকাতায় বুড়োদার বাড়িতে আছে বোন প্রিয়াঙ্কা (সরকার)। সে নীরবে দেখে শিবাজির(দেব)বড় হওয়ার সাধনা। ভাল না বেসে পারে না। কিন্তু শিবাজি আনমনা। নিজের স্বপ্ন পূরণে ছুটে চলেছে। তার পিছুটান শুধু মা(লাবনী সরকার)। ছেলে এগোয় অনেক দূর। লোকজনের নজরেও পড়ে। ফ্যান ফলোয়িং তৈরি হয়। এবং আসে প্রেম জয়া(রুক্মিণী)। একই সঙ্গে খুঁতখুঁতে সাংবাদিক (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) শিবাজির পিছু ছাড়ে না। কালেদিনে শিবাজি আর জয়ার প্রেম ঘর বাঁধতে তৈরি হয়। এ মেয়ে বক্সারকে ভালবেসে সব ছাড়তে তৈরি। অতএব চার হাত এক হয়। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়ে ফিরে আসে শিবাজি। আর পারবে না খেলতে। একে একে ছেড়ে চলে যায় সব কাছের মানুষ। চলে যায় স্পনসর। দেউলিয়া অবস্থা প্রায়। থাকে শুধু জয়া। এদিকে সে গর্ভবতী। হাসপাতালের টাকা জোগাড় করতে মরিয়া শিবাজি। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ফের নামে বক্সিং রিংয়ে। তারপর কী হয়? শিবাজি কি পারে জীবনের রিংয়ে জয়ী হতে? এ উত্তর রাখা আছে বড় পর্দাতেই।
[ বিদেশে শুটিং বন্ধ বাংলা ছবির, ক্ষতি প্রায় ৩ কোটি টাকা ]
মনে পড়ে, প্রয়াত মায়ের মুখ। গ্রামের দাদা-কাকাদের মুখ। ‘উড়বে যখন প্রজাপতি, হুল ফোটাবে বোলতা’, শিবাজির জীবনের মন্ত্র হয়ে দাঁড়াল এটাই। একজন বক্সারের চরিত্রে দেব অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করেছেন। বেশ পরিশ্রমে এসেছে তাঁর এই দৈহিক ট্রান্সফর্মেশন। সেই সঙ্গে এই ধরনের জন্য চরিত্রে অভিনয়ে যে পরিণতি বোধের প্রয়োজন, তারও প্রমাণ রেখেছেন দেব। অভিষেকেই চমকে দিয়েছেন রুক্মিণী। ছোট্ট চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা সরকারও যেন জ্বলে উঠেছেন চকমকি পাথরের মতোই। তবে চ্যাম্প-এর আসল টান গল্প। অতিচেনা গল্প, কিন্তু আমাদের সকলের জীবনের কাহিনি তা। ভাল লাগে জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অনুপম ও রাফতারের সুর। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর, ছবির সঙ্গে তা মানানসই।
[ বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ রজনীকান্তের মেয়ে ]
এতদিন আদুল গায়ে সলমন খানকেই দেখতে তাবৎ দেশের সঙ্গে আম বাঙালিও ভিড় করেছে। সেই সলমন খান এবারেও আছেন। তবে বাঙালি দর্শকের উচিত, এবার সে মোহ ছেড়ে বাঙালি নায়ককেও দেখা। কেননা সত্যিই পরিশ্রমে তিনি বিন্দুমাত্র খামতি রাখেননি। এবং শেষে যে উপহার তুলে দিয়েছেন, তার তারিফ না করে পারা যায় না। দঙ্গল, সুলতান বাজিমাত করেছে। সে সব ছবির মেরদণ্ড খেলাই। এবার একই অবলম্বনে নেমেছেন দেব। বলিউডের সঙ্গে সিনে যুদ্ধের রিংটিতে অবশ্য জয়লাভ সহজ নয়। তবে চেষ্টার কোনও খামতি রাখেননি।
The post কেমন হল দেবের ‘চ্যাম্প’? appeared first on Sangbad Pratidin.