বড়দিনে প্রথমবার সেলুলয়েডের অঙ্গনে পা রাখছেন প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। সত্যজিৎ রায়ের এই কালজয়ী সৃষ্টিকে নিয়ে ছবি তৈরি করেছেন তাঁরই সুযোগ্য পুত্র সন্দীপ রায়। আর সেই ছবিতেই প্রোফেসর শঙ্কু রূপে বড় পর্দায় আবির্ভূত হতে চলেছেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায়ের লেখা শঙ্কু সিরিজের অন্যতম গল্প ‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে সন্দীপ রায়ের ছবি ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’। ২০ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবি নিয়ে সোজাসাপটা অনেক কথাই বললেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। আমাজনে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা শোনালেন সোমনাথ লাহাকে।
শঙ্কু চরিত্রে অভিনয় করে কেমন লাগল বলুন…
ধৃতিমান: খুব ভাল লেগেছে। এটা একাধারে ভীষণ আকর্ষক আবার অন্যদিক দিয়ে দেখলে খুবই কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের সকলের কাছে। মানে আমরা যাঁরা এই ছবির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আমাদের অনেক দূর যেতে হয়েছে।
ব্রাজিলের কথা বলছেন…
ধৃতিমান: হ্যাঁ। ওখানে আমরা সাধারণত ভ্রমণ করতে যাই না। তবে শুধু ব্রাজিল নয়। ব্রাজিলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে হয়েছে। আমাজন রেন ফরেস্টে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। সেটা খুব কঠিন ছিল আমাদের সকলের কাছে।
এই গল্পটা তো…
ধৃতিমান: (প্রশ্ন শেষের আগেই) এখানে গল্প রয়েছে, সায়েন্স ফিকশন এলিমেন্ট রয়েছে। ডিএফএক্স রয়েছে। এমনকী এই ছবিতে কম্পিউটার জেনারেশন টেকনোলজিরও একটা বিষয় রয়েছে। এই সবকটাকে একত্রে মিশিয়ে কাজটা করা সহজ ব্যাপার নয়। যদিও সেটা পরিচালক করেছেন। আমরা আশাবাদী যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জিনিসটা আমরা দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছি সেটা সকলের ভাল লাগবে।
সন্দীপ রায় যখন আপনাকে বলেছিলেন যে শঙ্কু চরিত্রের জন্য উনি আপনাকে ভাবছেন প্রস্তুতিটা কি তখনই শুরু করে দিয়েছিলেন?
ধৃতিমান: তখন কোনও প্রস্তুতির সময় আসেনি। কারণ তখন যে ছবিটা হবে সেটা ঠিকই হয়নি। কারণ তখন ভাবনাচিন্তা চলছিল। প্রস্তুতি অনেক পরে এসেছে।
শঙ্কু নিয়ে এর আগে কোনও ছবি হয়নি। তাই কোনও বেঞ্চমার্কও নেই। আপনিই প্রথম শঙ্কু হচ্ছেন। সেটা কি আপনার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে?
ধৃতিমান: হ্যাঁ, সেটা তো বটেই। শঙ্কু নিয়ে সিনেমার অন্য কারও সঙ্গে তুলনা হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তুলনা করার বিষয়টাই চলে গিয়েছে। আর এই ছবিটা যদি দর্শকদের ভাল লাগে তাহলে আমরা শঙ্কুকে নিয়ে ফেলুদার মতোই সিরিজ করতে পারব বলে আশা রাখছি। তবে সবটাই নির্ভর করছে দর্শকদের উপর। আর ভবিষ্যতে যদি অন্য কেউ শঙ্কু করেন তাহলে এই ছবিটা একটা পয়েন্ট অফ রেফারেন্স হিসাবে থাকবে।
[ আরও পড়ুন: ‘বাবা নজরুল ইসলামের ভক্ত’, ঢাকায় গিয়ে আবেগে ভাসলেন সলমন ]
আপনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘গণশত্রু’, ‘আগন্তুক’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন। শেষদিন অবধি আপনার সঙ্গে ওঁর একটা সুন্দর সম্পর্ক ছিল। উনি কখনও শঙ্কুকে নিয়ে ছবি করার কথা ভাবেননি?
ধৃতিমান: না, মানিকদা শঙ্কু নিয়ে ছবি করার কথা ভাবেননি। কারণ উনি যখন কাজ করে গিয়েছেন সেই সময় ব্যবহারিক বা প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলা ছবি হিসাবে শঙ্কু করাটা সম্ভব ছিল না।
ছবিটা নিয়ে আপনি কতটা এক্সাইটেড?
ধৃতিমান: এর উত্তর এককথায় দেওয়া মুশকিল। তবে ছবিটা নিয়ে আমি আশাবদী। আমার মনে হয় এই ছবিটা সফল হবে।
আমাজনে শুটিং করার সময় ক্যানো দিয়ে বড় একটা ভেসেলে পৌঁছানোর সময় আপনারা সকলেই ঝড়বৃষ্টির কারণে ভিজে যান। আপনার শরীর খারাপ হয়ে যায়। জ্বরও হয়েছিল। বিষয়টা যদি একটু বলেন।
ধৃতিমান: আসলে নদীপথে অতখানি যাতায়াত করার সময় প্রায়শই ওখানে ঝড়-জল আসে। সেদিন প্রচণ্ড ঝড়-জল হওয়ায় আমরা একটা খাঁড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম। প্রচুর হাওয়া ছিল। তার ফলেই জ্বর এসে যায়। গলাও ভেঙে গিয়েছিল। তার মধ্যেও আমি যতটা সম্ভব কাজ করছিলাম। এমনকী ওখানকার স্থানীয় হাসপাতালেও গিয়েছিলাম। সেখানে ডায়াগনসিস করে আমার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। পরে অবশ্য জানা যায় যে ডায়াগনসিস ভুল ছিল। কিন্তু আমার নিউমোনিয়া হয়েছে শুনে ইউনিটের সকলেই খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর আমার শরীর খারাপ হয়ে কণ্ঠস্বরের অবস্থাও আরও খারাপ হয়ে যায়। শেষটায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম।
আমাজনে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে?
ধৃতিমান: না। আমাজনে রাত কাটানোর প্রয়োজন পড়েনি।
সন্দীপ রায় বলেছেন যে এই ছবিতে একটা বাঙালিয়ানা রয়েছে।
আপনি একজন আপাদমস্তক বাঙালি। শঙ্কুও একজন আপাদমস্তক বাঙালি। এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
ধৃতিমান: আসলে এই ছবিতে নকুড়বাবু থাকার জন্যই বাঙালিয়ানার যোগ রয়েছে। কারণ নকুড়বাবু গ্রাম্য বাঙালি। সেই কারণেই ছবি জুড়ে একটা বাঙালিয়ানা রয়েছে।
[ আরও পড়ুন: ছাদনাতলায় ‘জস্সি’, কাকে বিয়ে করছেন মোনা সিং? ]
The post প্রোফেসর শঙ্কুকে নিয়ে ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়? মুখ খুললেন ধৃতিমান appeared first on Sangbad Pratidin.