শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: প্রেমিকের ডাকে তারই পাঠানো টিকিটের সুবাদে আকাশপথে উড়ে গিয়েও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হওয়ার ‘ব্যর্থ প্রেমের গল্প’। নাকি মোবাইল গেম অ্যাপের সৌজন্যে যোগাযোগ করে এক নাবালিকাকে প্রেমের জালে ফাঁসানোর সক্রিয় চক্র থেকে পুলিশি তৎপরতায় মুক্তি। নেপথ্যে আসল কারণ যাই থাক না কেন, জলপাইগুড়ির এক নাবালিকা ছাত্রীর ‘প্রেম ও উদ্ধার-পর্ব’ যেন একেবারে হিন্দি সাসপেন্স থ্রিলার।
জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে ধূপগুড়ির বারোঘরিয়া গ্রামের সপ্তদশী এক ছাত্রীর সঙ্গে ভিডিও গেমের সূত্র ধরে সম্পর্ক তৈরি হয় হরিয়ানার এক যুবকের। মেয়েটির দাবি, মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল সে। এই প্রেমের মাস, ফেব্রুয়ারিতে আবার সেই সম্পর্ক জোড়া লাগে। প্রপোজ ডে-তে একে অপরকে সামনে দাঁড়িয়ে প্রেম নিবেদন করার পরিকল্পনা নেয় তারা। ছেলেটির পরামর্শে মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ হাজার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে ছেলেটিকে পাঠায়। সেই টাকা দিয়ে প্লেনের টিকিট কেটে হোয়াটস অ্যাপে মেয়েটিকে পাঠায় ছেলেটি। এরপর ছেলেটির শেখানো বুলি মতো পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধূপগুড়ি স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে পৌঁছে যায় বাগডোগরা। এরপর দিল্লিগামী বিমানে চেপে বসে।
মেয়েটির দাবি, ছেলেটির সঙ্গে দেখা করা এবং দুদণ্ড বসে কথা বলে প্রেম নিবেদন করার জন্যই তার এত দূর পথ পাড়ি দেওয়া। ছেলেটি বলেছিল, সে অপেক্ষায় থাকবে তার মুখোমুখি দুদণ্ড দেখা ও প্রেমের প্রস্তাবের। কিন্তু তা আর হল কই! সকালে পড়তে বের হওয়া মেয়ে দুপুরেও বাড়ি ফিরে না আসায় এদিকে-ওদিকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। সেই অভিযোগ পেয়ে মেয়েটির মোবাইল ফোন ট্র্যাক করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় পুলিশের। দেখা যায়, সকালে যে মেয়ের অবস্থান ছিল ধূপগুড়ি, সন্ধ্যায় সেই মেয়ে মধ্য আকাশে। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে রাজধানী দিল্লি।
[আরও পড়ুন: একুশের ভোট ‘সেনাপতি’ মিঠুনকে ফোন মোদির, নিলেন স্বাস্থ্যের খবর]
পরিবারের দাবি, বারোঘরিয়া থেকে বেরিয়ে পাশের গ্রাম মাগুরমারি, দুরামারি ভালো করে ঘুরে দেখেনি এই মেয়ে। সেই মেয়ে কোন জাদুবলে, কার অঙ্গুলিহেলনে পৌঁছে যাচ্ছে দিল্লি? পরিবারের পাশাপাশি এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে পুলিশ আধিকারিকদের মাথাতেও। পিছনে পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তাঁরা। এই অবস্থায় দিল্লি এয়ারপোর্ট অথরিটি এবং দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ধূপগুড়ি থানার পুলিশ কর্মীরা। দিল্লি পুলিশের সাহায্য নিয়েই এয়ারপোর্টে ছাত্রীকে আটক করা হয়। কিন্তু এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষমাণ সেই যুবকের হদিশ করতে পারেনি পুলিশ। এরপর ধূপগুড়ি থানা থেকে পুলিশ গিয়ে শনিবার সেই ছাত্রীকে ধূপগুড়ি নিয়ে আসে। রবিবার জলপাইগুড়ির একটি আবাসিক হোমে ছাত্রীটিকে নিয়ে আসা হয়।
ছেলেটির সম্পর্কেও জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ছেলেটির প্ররোচনায় পা দিয়ে দুঃসাহসিক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছে গ্রামের অত্যন্ত সহজসরল এই মেয়েটি। প্রথমে মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো। এরপর টাকা ছেলেটির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে কাউকে কিছু না জানিয়ে দিল্লিগামী বিমানে উঠে বসা। দিল্লিতে বসেই মেয়েটিকে অপারেট করছিল ছেলেটি। সেই কারণেই বিমান থেকে নামার পর প্রেমিক না প্রতারকের মুখোমুখি হত মেয়েটি- এই নিয়েও সংশয়ে পুলিশ। ধূপগুড়ি থানার আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য জানান, মেয়েটি আপাতত ট্রমার মধ্যে রয়েছে। আর একটু স্বাভাবিক হলেই ফের তার সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। ছেলেটির মোবাইল নম্বর নিয়ে তদন্ত শুরু করা হবে।