সৌরভ মাজি, বর্ধমান: একজন বলছেন, এমন খেলবেন পা ভেঙে দেবেন। আর একজন বলছেন, নারীর অপমান যারা করে তাদের বংশ ধ্বংস হয়ে যায়, তবে জানেন না ওনার কোনও বংশ আছে কি না। প্রথম বক্তা, বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। আর দ্বিতীয় জন হলেন এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। বুধবারের প্রচারে তাঁদের বাকযুদ্ধে সরগরম হয়ে ওঠে বর্ধমান ও শহর সংলগ্ন এলাকা।
এদিন বর্ধমান শহরের কালনা গেট এলাকায় প্রাতঃভ্রমণের পর দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন দিলীপ। সেই সময় অনিল তা নামে এক কর্মীর সঙ্গে কথোপকথনের ফাঁকেই তৃণমূলের স্লোগান 'ধার' করে বিজেপি কর্মীরা আওয়াজ তোলেন খেলা হবে, খেলা হবে। তখন ওই কর্মীকে দিলীপ ঘোষ বলেন, "আপনারা ভোটটা দেওয়ান। এরা ডায়ালগ মারে বাড়িতে। ভোটের দিন যায় না। ভোটটা দিতে যেতেই হবে।" তার পর ওই কর্মী তৃণমূল নিয়ে কিছু অনুযোগ করেন। তখনই বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, "টেনশন নেবেন না। দিলীপ ঘোষ খেলা জানে। আমার কাছ থেকে শিখেছে ওরা। এমন খেলব না পা ভেঙে দেবো।" তখন পিছন ফের থেকে স্লোগান ওঠে, খেলা হবে খেলা হবে।
[আরও পড়ুন: সরকারি স্কুলের খাতায় মমতার ছবি, রাজ্য ও মুখ্যমন্ত্রী বিরুদ্ধে কমিশনে বিজেপি]
এর পরই তৃণমূলকে আক্রমণ করে দিলীপ বলেন, "জিজ্ঞেস করবেন মেদিনীপুরের লোককে। আর ওখানকার গুন্ডা টিএমসিকে। রাস্তায় হাঁটতে পারে না ভালো করে।" এরা ভয় পাচ্ছে। আপনারা ভোটটা দেওয়ান। বেরিয়ে ভোটটা দিন। দিলীপ ঘোষ জোর করে বাড়িতে ঢুকে খাবেও। ভোটও নেবে।"এখানেই থামেননি দিলীপ। মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুরে প্রাতঃভ্রমণের সময় হাতে লাঠি থাকা নিয়ে প্রশ্নে মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ বলেন, "আমার মনে হয় না বর্ধমানে এমন উৎপাতের লোক আছে। থাকলে তাদের ঠান্ডা করার অন্য রাস্তাও আমাদের আছে। সকাল বেলা আমাকে একজন স্টিকটা দিয়েছিল। আমার গাড়িতে রাখা আছে। দরকার পড়লে বের করব।"
এদিন শক্তিগড় এলাকায় প্রচারের ফাঁকে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয় বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদকে। যার উত্তরে এই প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, "যিস আদমি কা দিমাগ হি নেহি উসকে বারে হাম ক্যায়া বাত করেঙ্গে? দিলীপ ঘোষের মতো লোকের জন্য সময় নষ্ট করতে চাই না। বর্ধমান-দুর্গাপুরের সেবা করার জন্য এসেছি। ওর সঙ্গে বাদানুবাদ করতে আসিনি। ওকে যা ইচ্ছা বলতে দিন। পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়।"
আরও পড়ুন: রচনা-লকেটের পর্দার লড়াই এবার ভোট ময়দানে, সিঙ্গুর আবেগের ফসল ঘরে তুলবে কে?]
দিলীপ সম্প্রতি প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন সেই সূত্র টেনে কীর্তি বলেন, "রাবণ মা সীতার অপমান করেছিল। ভগবান রাম তাকে বধ করেছিলেন। দ্রৌপদীকে কৌরবরা অপমান করেছিল। কৌরবদের বংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যে নারীর অপমান করে তার বংশ শেষ হয়ে যায়। যে লোকের বংশই নেই তার আর কি খারাপ হবে। মহিষাসুরের কোনও বংশ ছিল না। আমার জানা নেই এনার আছে কি নেই। নারীর অপমান, মায়ের অপমান কেউ সহ্য করবে না।"
রাজ্যে বার বার ইডি, সিবিআই অভিযান নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী অভিযোগর, "ইডি, সিবিআই যেন বিজেপিরই কোনও এজেন্সি। বাংলায় এসে বুথকর্মীদের হয়রানি করছে। এর থেকে স্পষ্ট বিজেপি এখানে হেরে বসে আছে। বিয়াল্লিশটার মধ্যে একটাও সিট ওরা পাবে না। বর্ধমান-দুর্গাপুরে ২ লক্ষের বেশি ভোটে আমরা জিতব।"
ভূপতিনগর বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে বিজেপির অভিযোগ ও এনআইএ তদন্ত প্রসঙ্গে কীর্তির কটাক্ষ, "বোমা বিস্ফোরণ তো গুজরাটেও হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে হয়েছে। সেখানে বিজেপির সরকার। সেখানে এনআইএ কি করেছে কেউ জানে না। শুধু বাংলায় এসে পিছনে পড়ে যায়। মমতাদিদির সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। দিদি মহিষাসুরমর্দিনী। অনেক মহিষাসুর এসেছে দুশো পার, দুশো পার বলেছে। ১০০ পার করতে পারেনি। কেউ অমিত শাহকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে দুশো পার বলেছিলেন কিন্তু একশোও পার করতে পারেননি কেন?"