রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: মুরলী ধর সেন লেনে বিজেপির (BJP) রাজ্য দপ্তরে দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহার ঘর ভাঙার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে! বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে খবর। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দিলীপ ঘোষের ঘরের এসির সংযোগ। দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতার ঘর ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরে। এই প্রচেষ্টা আদপে বঙ্গ বিজেপির সফলতম সভাপতি দিলীপ ঘোষ আর রাহুল সিনহাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দিলীপ ও রাহুল শিবিরের লোকজন এটাকে অপমান বলেই মনে করছে।
সূত্রের খবর, দিলীপ ঘোষের ঘর থেকে এসির সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি বসতে না পারেন। গত শনিবার এই অবস্থায় দিলীপ ঘোষ রাজ্য অফিসে যান এবং ঘর খুলে বসেন। কথা বলেন দেখা করতে আসা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। কর্মীদের দিলীপ বলে যান, প্রতিদিন এই ঘর খুলে বসতে। তিনি কলকাতায় থাকলে এখানে আবার বসবেন। এই বিষয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপত্র শমীক ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অধিকাংশ রাজ্য নেতারাও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। দলের একাংশ চাইছে না লোকসভা নির্বাচনের আগে দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির ঘর ভাঙা নিয়ে কোনও বিতর্ক হোক। অনেকেই এই ঘর ভাঙার পক্ষে নয়। ঘর ভাঙার চেষ্টা হলে, বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ করবে বলেও জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: খলিস্তানি দাবিকে ‘সমর্থন’ ট্রুডোর, কানাডা থেকে বহিষ্কৃত ভারতীয় শীর্ষ কূটনীতিক]
এখনও সারা রাজ্যে দলের মধ্যে দিলীপ ঘোষ এবং রাহুল সিনহার দাপট রয়েছে। তাছাড়া, রাজ্য বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। রাজ্য বিজেপির সফলতম সভাপতি তিনি। জেলায় জেলায় দিলীপ আর রাহুলদের পক্ষে আছে বহু কর্মী। তাই রাজ্য দপ্তরে তাঁদের ঘর ভাঙলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে দলের মধ্যে বলেই মনে করছে বঙ্গ বিজেপির একাংশ। এমনিতেই গোষ্ঠী কোন্দলে জর্জরিত বঙ্গ বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে দলের সংগঠনের বেহাল অবস্থা ও কোন্দল ভাবাচ্ছে নেতাদের। তার উপর দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির ঘর রাজ্য অফিস থেকে তুলে দিলে পরিস্থিতি আরও বুমেরাং হতে পারে বলেই মনে করছে দলের একাংশ।
জানা গিয়েছে, এই ঘড় ভাঙার নির্দেশ দেন এই রাজ্যের দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। তাঁরা কলকাতায় এলে থাকেন যে কোনও পাঁচতারা হোটেলে। খুব বেশি দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন না। বৈঠক করেন আর চলে যান। মুরলী ধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য অফিস বহু পুরনো। ১৯২৬ সালে জনসংঘ এই বাড়িতে একটি ঘর নিয়ে অফিস করে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বসতেন এই অফিসে। এখান থেকেই দল পরিচালনা করতেন। অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপির সব নেতারা এসেছেন, এই রাজ্য দপ্তরে। বৈঠকও করেছেন। গত জানুয়ারিতে অমিত শাহ এসেছিলেন। তাই ৬ নং মুরলী ধর সেন লেনের এই অফিসের গুরুত্ব রয়েছে। বঙ্গ বিজেপির কর্মীদের কাছে আবেগ ও ভালবাসার জায়গা এই অফিস। আর এই রাজ্য অফিস থেকেই সমস্ত কাজকর্ম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছে বর্তমান বঙ্গ বিজেপির শাসক শিবির।
[আরও পড়ুন: মালদহের বেহুলা সেতুতে ফাটল, ছবি তুলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সতর্ক করলেন থানার IC]
জানা গিয়েছে, এই পুরনো অফিস পছন্দ নয় বিজেপি পর্যবেক্ষকদের। তাঁরা চান, সেন্ট্রাল এসি সমেত ঝাঁ চকচকে বিজেপির অফিস। তাই সল্টলেকে বিরাট অফিস হয়েছে। সেক্টর ফাইভে সেই অফিসকে রাজ্য অফিস বলে ঘোষনা করতে পাচ্ছে না বিজেপি নেতারা। আরও জানা গিয়েছে, বিজেপির মুরলী ধর সেন লেনের রাজ্য অফিস থেকে সব তুলে দেওয়া হবে। তার বদলে আইটি সেল কাজ করবে। নতুন অফিসে দুটোতলায় আইটি সেল আছে । রাজ্য অফিসেও একটা বড় আইটি সেল আছে। দলীয় কর্মীদের প্রশ্ন , কী হবে এত আইটি সেল করে? কর্মীদের বিক্ষোভের ভয়ে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা রাজ্য অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁরা শুধু সল্টলেকে অফিসে যান। আর দলীয় কর্মীরা প্রস্তুত নিচ্ছে, দিলীপ ঘোষ রাহুল সিনহাদের ঘর ভাঙার চেষ্টা হলে প্রতিরোধ এবং বিক্ষোভ হবে। সব মিলিয়ে বঙ্গ বিজেপিতে বিতর্ক তুঙ্গে।