বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: গোটা রাজ্যের তো কোন ছার, শুভেন্দু অধিকারীকে নিজের জেলার বাইরে কোনও নেতা বলেই মনে করেন না দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)! মঙ্গলবার দিল্লিতে নিজের বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এমনটাই বুঝিয়ে দিলেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তুললেন নিজস্ব ভঙ্গিতে।তাঁর তিরের নিশানা থেকে বাদ পড়েননি বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) থেকে মাঝে মধ্যেই দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে বেসুরে গান গাওয়া সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র মতো অনেকেই। আর এসবেরই ফাঁকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর এক প্রশ্নের জবাবে দিলীপের মন্তব্য, “শুভেন্দু কোনও জননেতা নন, শুধু মেদিনীপুরের নেতা।”
লোকসভা ভোটের মুখে গেরুয়া পতাকা হাতে নেওয়ার পর থেকেই শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) গোটা বাংলার জননেতা বলে প্রচার করার চেষ্টা করছে দলের একাংশ। পালটা এদিন রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী দলনেতাকে সেভাবে কোনও ‘ওজনদার’ বলেই স্বীকৃতি দিতে রাজি হলেন না দিলীপ। তাঁর স্পষ্ট প্রশ্ন, জননেতা হলে শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা হওয়ার পরও বাংলায় বিজেপি আরও দুর্বল হচ্ছে কেন? দিলীপের বক্তব্য, মেদিনীপুরে বিরোধী দলনেতার জনপ্রিয়তা থাকলেও অন্য জেলায় সেভাবে নেই। মতের সপক্ষে যুক্তি সাজিয়ে শীর্ষনেতৃত্বের কাছে সেগুলি তিনি তুলে ধরাও শুরু করেছেন বলে বিজেপি সূত্রে খবর। এক্ষেত্রে কাঁথি ও কলকাতার পুরভোট ছাড়াও উপনির্বাচনে দলের তরফে শুভেন্দুর উপর অর্পিত দায়িত্ব ও ভোটের ফলাফল তুলে ধরেছেন। দিলীপের লক্ষ্য, শাহ-নাড্ডাদের মনে শুভেন্দু সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ইমেজ বা ‘মিথ’ রয়েছে, তা ভেঙে দেওয়া।
[আরও পড়ুন: শিশুর যৌন হেনস্তাকারীর সঙ্গে সমঝোতা করতে পারবেন না অভিভাবকরা, জানাল হাই কোর্ট]
লোকসভা ভোটের পর বাংলায় বিজেপির রক্তাল্পতা নিয়ে এদিন ঠারে ঠোরে দিলীপ দায় চাপিয়েছেন তাঁর উত্তরসূরি সুকান্ত মজুমদার-সহ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর উপর। তিনি বলেন, “সুকান্ত ভাল মানুষ হলেও চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন না। আমি চোখে চোখ রেখে কথা বলতাম। তাই লোকসভা ভোটে ফল ভাল হয়েছিল। সংগঠনও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছিল। এখন সংগঠন দিন কে দিন দুর্বল হচ্ছে।” আগামীদিনে অর্জুন সিংয়ের মতো আরও কয়েকজন দলবদল করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন দিলীপ। পাশাপাশি আরেক সাংসদ সৌমিত্র খাঁর জঙ্গলমহলকে নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবিকেও খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, “দাবি করলেই হয় না। তার পিছনে যুক্তিও থাকতে হবে। বিজেপির এমন কোনও নীতি নেই যে পৃথক রাজ্যে দাবি করলেই তা হয়ে যাবে।”
প্রসঙ্গত, এদিনই কলকাতায় সৌমিত্র খাঁ তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন অর্জুন সিং। যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই সম্ভাবনা খারিজ করেন সৌমিত্র নিজেই। এনিয়ে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “আরও কয়েকজন যেতে পারে। সময় বলবে কে যাবে।” কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিরোধীরা চক্রান্ত করে দলের মধ্যে একটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করছে। এই বাতাবরণ দূর হওয়া দরকার।” নিউটাউনে একটি হোটেলে এদিন সৌমিত্রকে নিয়ে বৈঠক করেন শুভেন্দু ও সুকান্ত। বৈঠকে শঙ্কুদেব পণ্ডাও ছিলেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে শুভেন্দু সৌমিত্রকে নির্দেশ দেন, বারাকপুরের সংগঠন দেখার। দলের সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার সকালে তিনদিনের দিল্লি সফরে এসেছেন দিলীপ। বিজেপি সূত্রে খবর, বৈঠকে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির রক্তক্ষরণ নিয়ে শীর্ষনেতৃত্বের কাছে নালিশও জানিয়েছেন তিনি। এদিন এ বিষয়ে মুখ না খুললেও তাঁকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর বাংলায় বিজেপির সংগঠন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া নিয়ে মন্তব্য শোনা গিয়েছে দিলীপের মুখে।
[আরও পড়ুন: একদিনে লাফিয়ে ২৭ শতাংশ বাড়ল দেশের করোনা সংক্রমণ, প্রাণ হারালেন ১৭ জন]
তাঁর কথায়, তাঁর আমলে রাজ্যে ৮০ হাজার বুথের মধ্যে ৬৫ হাজার বুথে বিজেপির কমিটি ছিল। কিন্তু বর্তমানে তার অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। তাঁর যুক্তি, ১৫ হাজার বুথ করা যায়নি, সেগুলি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। এদিন দিলীপের নিশানা থেক বাদ পড়েননি দলের আরেক সাংসদ অনুপম হাজরাও। দিলীপের ‘দুধ থেকে সোনা পাওয়া’ মন্তব্যকে ‘আইনস্টাইনসুলভ’ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন অনুপম। পালটা কটাক্ষে অনুপমকে ‘জনভিত্তিহীন’ ও ‘সোশ্যাল মিডিয়া সর্বস্ব’ বলে খোঁচা দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। অনুপম হাজরাকে পিছনে ফিরে তাকানোর পরামর্শ দিয়ে তাঁর দাবি, দুধ থেকে সোনা জাতীয় বক্তব্যের জন্যই দল লোকসভায় বঙ্গে ১৮টি আসন ও বিধানসভায় তিন থেকে ৭৭ হয়েছে। তাঁর কথায়, “এই ধরনের নেতারা আন্দোলন করেন না। কোনও জনভিত্তি নেই। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ভাসিয়ে রাখেন।” মোদি সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি নিয়ে আজ দলের সাংসদ, বিধায়ক ও পদাধিকারীদের নিয়ে দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন নাড্ডা।