রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: হাজরার সভামঞ্চে নাম না করে দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করে দলের মধ্যেই বিপাকে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। প্রকাশ্যে দলের কোনও শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্য ভালভাবে নিচ্ছে না দিল্লি। শুধু তাই নয়, দিলীপের পাশে দাঁড়িয়ে সুকান্ত (Sukanta Majumder) মজুমদারও সমর্থন করছেন না শুভেন্দুর এই মন্তব্যকে। তবে নাম না করে শুভেন্দুকে পালটা দিয়েছেন দিলীপ ঘোষও। তাঁর মন্তব্য, ”মর্নিং ওয়াক করতে গেলে দম চাই।”
সোমবার হাজরার সভায় দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) নাম না করে আক্রমণ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে তিনি মিডিয়াকে স্টেটমেন্ট দেন না। মঞ্চেই বিরোধী দলনেতাকে সুকান্ত বলেন, ”এটা বলা আপনার ঠিক হয়নি।” পালটা শুভেন্দু বলেন, ”যা বলেছি ভেবেচিন্তে বলেছি।” ফলে মঞ্চেই এটা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে যায় সুকান্ত-শুভেন্দুর মধ্যে। হাজরার সভায় শেষে ভাষণ দিতে গিয়ে সুকান্ত জানিয়ে দেন, তিনি বিরোধী দলনেতার মতো কোনও মাস বা তারিখের কথা বলছেন না। স্পষ্ট হয়ে যায়, ডিসেম্বর ধামাকা নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপি পার্টি, সুকান্ত ও দিলীপরা কেউ সহমত নন। ফলে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হতে শুরু করে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।
[আরও পড়ুন: ‘মনে হচ্ছে ভাল কাজ হচ্ছে’, TET নিয়ে সন্তুষ্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়]
প্রকাশ্যে দিলীপকে আক্রমণ নিয়ে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ব্যাপক চটেছে আরএসএস-ও। নাড্ডার কাছেও গিয়েছে রিপোর্ট। সূত্রের খবর, এরপরই মঙ্গলবার শুভেন্দুর সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ সূচিও বাতিল করে দেন জে পি নাড্ডা (JP Nadda)। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার কেশব ভবনে আরএসএসের রাজ্যস্তরে সমন্বয় বৈঠক হতে চলেছে। সেখানে আরএসএসের শীর্ষ নেতা অরুণ কুমারের উপস্থিতিতে বৈঠকে সুকান্ত, দিলীপ, অমিতাভ চক্রবর্তীরা ডাক পেয়েছেন। কিন্তু একদা সংঘের প্রচারক দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার পর সেই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী ডাক পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত বিরোধী দলনেতার কাছে ডাক আসেনি।
সূত্রের খবর, হাজরার সভা শেষের পর সুকান্ত মজুমদার ফোনে দিলীপ ঘোষকে বলেন, ”আমি শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছি।” দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকেও পুরোও বিষয়টি জানান সুকান্ত। দিল্লিতে থাকা দিলীপ ঘোষও দলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে ফোন করে বলেন, কোর্টের শুনানির দিনের উপর নির্ভর করে এভাবে তারিখের পর তারিখ দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এটা রাজনীতি হচ্ছে না। মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আরএসএসের জলধর মাহাতোর কাছেও নালিশ করেছেন দিলীপ। সূত্রের খবর, আরএসএসের তরফে জে পি নাড্ডাকে বলা হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীকে ‘সেন্সর’ করুন।
[আরও পড়ুন: ‘কে পাপ্পু?’, দেশের অর্থনীতি, হিমাচলে হার নিয়ে সংসদে বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ মহুয়ার]
আর এসবের মধ্যেই জে পি নাড্ডা সাক্ষাৎ বাতিল করেছেন শুভেন্দুর সঙ্গে। মঙ্গলবার দিল্লিতে নাড্ডার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল শুভেন্দুর। বিমানের টিকিটও কাটা ছিল। কিন্তু সোমবার রাতে দিল্লি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় নাড্ডা এদিন সাক্ষাৎ করবেন না। ফলে টিকিট বাতিল করতে হয় বিরোধী দলনেতাকে। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও শুভেন্দুকে সময় দিয়েছিলেন দেখা করার জন্য। তা অবশ্য আগেই বাতিল করে দিয়েছেন শাহ। এদিকে, শুভেন্দুর আক্রমণ নিয়ে দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘আমাকে দেখে অনেকে প্রেরণা পেয়ে এখন মর্নিং ওয়াক করছেন। মর্নিং ওয়াক করতে গেলে দম চাই। কে ব্যক্তিগতভাবে কী বলছে কিছু যায় আসে না।’’
শুভেন্দুর এই তারিখ-মাসের তত্ত্ব নিয়ে বিজেপিতে শুরু হয়েছে ঘোর বিরোধ। প্রশ্ন উঠেছে, দল কি আদালতের দিকে তাকিয়ে চলবে? প্রকাশ্যে শুভেন্দু তাঁকে যেভাবে আক্রমণ করেছেন, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে চরম ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। বলেছেন, কীসের ডেট? এর সঙ্গে পার্টির কোনও সম্পর্ক নেই। কোর্টের উপর, সিবিআইয়ের উপর নির্ভর করে দল চলবে? সিবিআই আর কোর্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না। লোক তো এটাই বলছে যে ওদের কথাতেই সব হচ্ছে। এই ডিসেম্বর ধামাকা নিয়ে শুভেন্দুর সুরে কয়েকদিন সুর মিলিয়েছিলেন সুকান্ত। সে ব্যাপারেও দিলীপ কথা বলেন সুকান্তর সঙ্গে। তারপর থেকে অবশ্য সুকান্ত মাস-তারিখ নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে একমত নন বলে প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে, বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে নাড্ডার কাছে চিঠি পাঠিয়ে সামসুর রহমান জানিয়েছেন, এভাবে বারবার তারিখ-মাসের কথা উল্লেখ করায় কর্মীদের মনোবল ধাক্কা খাচ্ছে।