অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: বেলাগাম, বিতর্কিত মন্তব্য তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবে ঘনিষ্ঠরা বলে থাকেন, সেই সবই তাঁর রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি। এবার অবশ্য রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) কৌশল প্রয়োগ করে বিতর্কের জন্ম দিলেন না। রীতিমতো মেজাজ হারিয়েই নিজের দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিলেন স্থানীয়দের। রবিবার সকালে খড়গপুরের ২ নং ওয়ার্ড এলাকায় জল যন্ত্রণা (Water logging) নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে ধৈর্য হারালেন মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এবং রীতিমতো অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে পরামর্শ দিলেন, স্থানীয়রাই যেন ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন। তাঁকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে রাখুন, তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে নোংরা ফেলে আসুন। বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্য ফের বুঝিয়ে দিল, দলের অন্দরেই কত অসন্তোষ।
টানা বৃষ্টিতে এখনও জমা জলের সমস্যায় খড়গপুরের (Kharagpur) বাসিন্দারা। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা, জমা জল কিছুতেই নামছে না। বৃষ্টি থামার চার, পাঁচদিন পরও রাস্তা জলমগ্ন। এই পরিস্থিতিতে খড়গপুরে গিয়ে শনিবারই শাসকদলকে দুষেছিলেন দিলীপ ঘোষ। রাজ্য সরকার কোনও কাজ করেনি বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। দিলীপের নিশানায় ছিলেন ঘাটালের তারকা তৃণমূল সাংসদ দেবও। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্যান্য জায়গার মতো বৃষ্টির জলে প্লাবিত ঘাটালও। আর রবিবার তিনি একই অভিযোগ পেয়ে মেজাজ হারিয়ে লাগামহীন মন্তব্য করলেন।
[আরও পডুন: অমিল বৈধ কাগজপত্র, কথাবার্তায় একাধিক অসঙ্গতি, ভাতারে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী]
জানা গিয়েছে, খড়গপুরের এক বিজেপি কর্মী চরণজিৎ সিং আহত হয়ে মাসখানেক ধরে প্রায় শয্যাশায়ী। খড়গপুর গিয়ে রবিবার ২ নং ওয়ার্ড এলাকার আনন্দনগরের বাড়িতে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকে ফেরার পথে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান। জমা জলের যন্ত্রণা নিয়ে অভিযোগ জানাতে থাকেন। তাতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সাংসদ। রীতিমতো অগ্নিশর্মা হয়ে তিনি বলেন, ”আমি কী করব আর? সাংসদ তহবিলের টাকা দিয়েছি। নালা তৈরি করেছি। সবই কি দিলীপ ঘোষ করে দেবে?” তাতে বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর কোনও কাজই করছেন না। তাঁর দেখাই মেলে না। তাতে তিনি আরও রেগেমেগে বলেন, ”ওঁকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে রাখুন। ওঁর বাড়ির সামনে নোংরা ফেলে আসুন।” এ প্রসঙ্গে তিনি আরও কুরুচিকর ভাষায় কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে মলত্যাগ করে আসার পরামর্শও দেন।
[আরও পডুন: অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশকর্মীর হাতেই আক্রান্ত সোনারপুর থানার SI, গ্রেপ্তার ৪]
আসলে খড়গপুর ২ নং ওয়ার্ডের বিজেপি (BJP) কাউন্সিলর শুকরাজ কৌর। ৫ বছর আগে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর এলাকায় তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। নাগরিক পরিষেবার সমস্ত কাজকর্ম দেখভাল করে থাকেন তাঁর স্বামী। সেভাবেই চলছিল। কিন্তু এবারের বৃষ্টি সেই গতানুগতিক কাজকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। নাগরিকদের বিক্ষোভের মুখে এবার তিনি নিজেও দলের শীর্ষনেতাদের রোষানলে পড়লেন।