সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৯ সালে ফের দিল্লি জয় করে উপহারের ডালি নিয়ে মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে যে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চাইছে চিন, সেই বিষয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে সতর্ক করেছিলেন তিনি। আর তাঁর সেই কূটনৈতিক দৌত্য যে সফল হয়েছে তা স্পষ্ট করে মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, বিপদের সময় সবার আগে পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। ফলে সেদেশে ভারত বিরোধী কোনও কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হবে না।
[আরও পড়ুন: কান্দাহারে নৃশংস হামলা তালিবানের, মৃত শতাধিক আফগান]
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করে গত বুধবার ভারত সফরে দিল্লি পৌঁছেছেন মালদ্বীপের (Maldives) বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লা শহিদ। বলে রাখা ভাল, গত জুন মাসে রাষ্ট্রসংঘের ৭৬তম সাধারণ সভার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদেশমন্ত্রী শহিদ জানান, বিপদের সময় সবার প্রথমে ভারতই পাশে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও মজবুত। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “পূর্বতন সরকারের কিছু লোক মালদ্বীপে ভারত বিরোধী কাজ চালাচ্ছে। তবে তারা সংখ্যালঘু।” সম্প্রতি মালদ্বীপে কর্মরত ভারতীয় কুটনীতিবিদ ও দূতাবাসের কর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে সেখানকার কিছু সংবাদমাধ্যম। আর এই গোটা ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে চিন রয়েছে বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক। ফলে কুটনীতিবিদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মালের সঙ্গে আলোচনা চালায় মোদি সরকার বলে সূত্রের খবর। এই বিষয়ে ভারতের সফররত মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী শহিদ বলেন, “ভিয়েনা চুক্তি মেনে বিদেশি কুটনিবিদের সুরক্ষা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করেছে সরকার। কুটনীতিবিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর নেপথ্যে বৃহৎ ষড়যন্ত্র রয়েছে।”
উল্লেখ্য, ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে সেই অর্থে বিশ্বমানের কোনও স্টেডিয়াম নেই। সেখানে একটি বিশ্বমানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি করতে আর্থিক সাহায্য দেবে ভারত। মালদ্বীপের সেনা ও নৌবাহিনীর জন্য উন্নতমানের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করে দেবে ভারত সরকার। সুনামি, সাইক্লোন, সামুদ্রিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম খবর জানতে ভারতের উদ্যোগে মালদ্বীপের উপকূলে বসানো হবে উন্নত রেডার সিস্টেম। পানীয় জল সমস্যা ও রোগ প্রতিরোধে মালদ্বীপের সরকারি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কেরল ও তামিলনাড়ুতে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হবে। করোনা আবহেও দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। ফলে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশটিতে চিনা প্রভাব অনেকটাই খর্ব করতে সক্ষম হয়েছে নয়াদিল্লি। বিষয়টি স্পষ্ট করে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, পূর্বতন সরকার অর্থাৎ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন ভারত ও চিন দুই দেশকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে কাজ উদ্ধার করতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পালটেছে তাদের দেশে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বলে রাখা ভাল। সেদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন ছিলেন চিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ইয়ামিনের জমানায় চিনের সঙ্গে সখ্যতা দৃঢ় হয়েছিল মালদ্বীপের। বেজিংয়ের থেকে প্রচুর ঋণও নিয়েছিল ইয়ামিন সরকার। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই দ্বীপরাষ্ট্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল বেজিং। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই নির্বাচনে জয়লাভ করে মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি)। প্রেসিডেন্ট পদে বসেন ‘ভারতপন্থী’ ৫৪ বছরের ইব্রাহিম মহম্মদ সলিহ। এর ফলে ভারত মহাসাগরের বুকে মালদ্বীপে বিশাল নৌঘাঁটি বানানোর যে স্বপ্ন ছিল চিনের তা আপাতত ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে৷