নব্যেন্দু হাজরা: রাত পোহালেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। আর তার পরই আলোর উৎসব দীপাবলিতে মেতে ওঠার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে বাংলা জুড়ে। জেলায় জেলায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে আতসবাজি মেলাও। তবে সবই পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি। আর এবার এই সবুজ বাজির জোগানদার মূলত ভিনরাজ্য। তামিলনাড়ু, হরিয়ানার সবুজ বাজিতেই এবার দীপাবলি পালন করবেন বঙ্গবাসী।
ভিনরাজ্য থেকে ইতিমধ্যেই ৫০০ লরি সবুজ বাজি রাজ্যে ঢুকেছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, আদালতের নির্দেশে শুধুমাত্র সবুজ বাজিই পোড়ানো যাবে রাজ্যে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সবুজ বাজি তো এরাজ্যে এখনও তৈরি হয় না। তাই চলতি বছরে এই বাজির জোগানে মূলত তামিলনাড়ুর উপরই ভরসা করছে বাংলা। ফুলঝুরি, রংমশাল, তুবড়ি থেকে হাওয়াই, চরকি সবই আসছে ওই রাজ্য থেকে। তাছাড়া হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ থেকেও কিছু বাজি আসছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক জেলায় সবুজ বাজি বিক্রির মেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী মাসের গোড়াতেই ময়দানেও বসবে আতসবাজির মেলা। সেখানেও শুধুমাত্র সবুজ বাজিই মিলবে। পাশাপাশি কালীপুজোর আগে রাজ্যের ১৫০ জায়গায় এই মেলা হবে।
[আরও পডু়ন: রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক]
ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তরফে এই ‘গ্রিন ক্র্যাকার্স’-এর বিষয়ে জানানো হয়েছে, এতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে না। এর মানে হল, বায়ুদূষণ হ্রাস পায় এই বাজি পোড়ানো হলেও। ফলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও কম হয়। এতে অ্যালুমিনিয়াম, বেরিয়াম, পটাসিয়াম নাইট্রেট বা কার্বন থাকে না। এর জন্যই এগুলি পরিবেশবান্ধবের তকমা পেয়েছে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সবুজ বাজি সাধারণ বাজির তুলনায় ৩০ শতাংশ কম দূষণ করে সবুজ বাজি। সাধারণ বাজিতে থাকে বেরিয়াম নাইট্রেট। যা ঘন ধোঁয়া তৈরি করে, বাড়ে দূষণ। শুধু তাই নয়, এক একটি শব্দবাজিতে শব্দদূষণও হয়। প্রায় ১৬০ ডেসিবেল আওয়াজ হয় এক একটি বাজি ফাটলে। সেখানে সবুজ বাজিতে সাধারণত আওয়াজ হতে পারে ১১০ ডেসিবেল। যদিও সাধারণ বাজিগুলির থেকে এই সবুজ বাজি অনেকটাই ব্যয়বহুল।
[আরও পডু়ন: দেশের জন্য সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা খাটুক তরুণ প্রজন্ম, নারায়ণমূর্তির পরামর্শে বিতর্ক]
রাজে্য সবুজ বাজি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতে কালীপুজোর সময় বাজির যে পরিমাণ চাহিদা তা মেটানো কোনওভাবেই সম্ভব নয়। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই ভিনরাজ্য থেকে আনা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব বাজি। এরাজ্যে নুঙ্গি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’টি করে, এবং চম্পাহাটি ও কাঁচরাপাড়ায় সবুজ বাজি তৈরির কারখানা রয়েছে। সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বাবলা রায় বলেন, ‘‘বাংলাতেও সবুজ বাজি তৈরি হচ্ছে। তবে যা চাহিদা তাতে তামিলনাড়ু থেকেই মূলত এই বাজি আনা হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য আরও বেশ কিছু রাজ্য থেকে আসছে। তবে আগামীদিনে আমাদের রাজ্যে তৈরি পরিবেশবান্ধব বাজিই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’’