স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: লোকসভা ভোটে আসন রফা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা চলতেই পারে, কিন্তু কোনওমতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চটানো যাবে না। ইন্ডিয়া জোটের আসন রফা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসকে একথা বুঝিয়ে দিলেন স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘টোটাল বিজেপি টিমকে হারাতে পারেন মমতা, এটা প্রমাণিত। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে মোদিকে ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে জনপ্রিয় মুখ তা অন্য দলের প্রবীণ নেতারাও স্বীকার করছেন। পরপর চারটি বৈঠকে ইন্ডিয়া জোটের শরিকরাও সকলে তৃণমূল নেত্রীকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই বাংলায় বিয়াল্লিশের মধ্যে দুটি না চারটি আসনে আমরা তৃণমূলের সঙ্গে রফা করব, সে আলোচনা শীর্ষস্তরে চলতেই পারে। কিন্তু আমাদের দলের কেউ এমন বেফাঁস কিছু বলবেন না, যাতে কংগ্রেস নিয়ে মমতা আগামিদিনে চটে যান।’’
বস্তুত বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে আসন রফা নিয়ে যেদিন নাগপুরে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী মন্তব্য করলেন সেদিনই রাজ্য কংগ্রেসকে সোনিয়ার তরফে এল স্পষ্ট কড়া গাইডলাইন। বিশেষ করে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হলে যে গেরুয়া শিবিরের সুবিধা হবে তা মনে করেই এবার নির্বাচনে মমতার সঙ্গেই পথ চলার সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। বিজেপিকে রুখতে এবং অবিজেপি ভোট যাতে ভাগ না হয় সেই লক্ষ্যে রাজধানীর কংগ্রেস নেতারাও এখন সোনিয়ার মতোই মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে চাইছেন।
[আরও পড়ুন: রাইমার সিনেমা দেখতে বলছেন মোদি, লোকসভা ভোটের আগে কেন এই টোটকা প্রধানমন্ত্রীর?]
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে দলের সাংগঠনিক শক্তির কথা উল্লেখ করে যে বাড়তি আসন দাবি করা হয়েছে, সে নিয়েও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। বলেছেন, ‘‘ওই তো সিপিএমের সঙ্গে জোট করেও কংগ্রেস দুটো ট্র্যাডিশনাল সিট পেয়েছে গত লোকসভা ভোটে। উলটে ভোটের হার তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। আর বিধানসভায় তো দলের ফল শূন্য। পঞ্চায়েত ও পুরসভা ভোটে তো অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দলের প্রতিনিধিত্ব দেখতে হয়।’’
রাজ্য কংগ্রেসের একাংশের তরফে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে একা লড়া নিয়ে প্রদেশ নেতাদের প্রস্তাবকেও তীব্র কটাক্ষ করে ঘনিষ্ঠ মহলে সোনিয়ার মন্তব্য, ‘‘মুরোদ জানা আছে বাংলার কংগ্রেস নেতাদের। অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট যা পেয়েছি, তাতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলেই বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ সিট দুটো নিশ্চিত হবে। আসলে আমাদের মূল টার্গেট, মোদির আসন সংখ্যা যত বেশি কমানো যায়। সেক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটে মমতাকে খুবই প্রয়োজন। আর একের পর এক ভোটের ফলই বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিকল্প নেই। কারণ, উনি ২০২১ সালে মোদি-শাহদের টোটাল টিমকে হারিয়ে সটান দিল্লি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।’’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে যখন রাহুল আলোচনায় বসেছিলেন তখন যে রিপোর্ট তাঁর হাতে ছিল তাতে চমকে উঠেছে হাইকম্যান্ড। কারণ, রাজ্যের সমস্ত জেলাপরিষদ ও একটি বাদে সমস্ত পুরসভাই এখন তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। কলকাতায় কংগ্রেসের হয়ে কোনও মিছিল বা মিটিংয়ে জমায়েত একশো পার হয় না। তিন রাজ্যের ভোটে হারার পর সোনিয়া-রাহুল যে বিভিন্ন প্রদেশে আঞ্চলিক শক্তিশালী দলগুলির সঙ্গে জোট করার জন্য মরিয়া তা ইতিমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করায় স্পষ্ট। সূত্রের খবর, বাংলায় আসন রফা নিয়ে রাহুল নিজেই উদ্যোগী হয়ে ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।
আর তৃণমূলের সঙ্গে রাহুলের সেই বৈঠক যে ফলপ্রসূ এবং ইতিবাচক হয়েছে সেকথা স্বীকার করেছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। মমতাকে না চটানোর টার্গেট নেওয়ার কারণের নেপথ্যে রয়েছে আরও একটি ফর্মুলা। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, রূপশ্রীর মতো বেশ কিছু প্রকল্প মমতা পশ্চিমবঙ্গে চালু করেছেন, যেগুলি দেশের অন্যান্য রাজ্য ‘কপি’ করে সেখানকার ভোটারদের মন জয় করতে শুরু করেছে। স্বভাবতই নানা জনমুখী প্রকল্প চালু করে মমতা যখন দেশে ‘রোল মডেল’ এবং সর্বোপরি এই মুহূর্তে সোনিয়া ও রাহুলের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ যথেষ্ট ভালো, তখন নতুন করে আর তৃণমূলনেত্রীর বিরাগভাজন হতে চাইছে না কংগ্রেস হাইকমান্ড।