দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কন্যাসন্তানের জন্মের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল মায়ের। বাড়ির লোকের কাছে দ্রুত এক বোতল রক্ত চেয়েছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাড়ির লোক ঘুরে ঘুরে কোনওক্রমে এক বোতল রক্ত জোগাড় করেন। কিন্তু সেই রক্ত আনার পর চিকিৎসক আবারও এক বোতল রক্ত আনার কথা বলেন। তখন বৃহস্পতিবার ভোররাত। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার দুপুর গড়িয়ে যায় সেই রক্ত আনতে। সময়মতো সেই রক্তও ডাক্তার দেননি বলে অভিযোগ। পরে চিকিৎসক জানান, রক্ত দিলেও প্রসূতিকে বাঁচানো গেল না। বৃহস্পতিবার দিনভর বারুইপুর হাসপাতালে এই মৃত্যু নিয়েই তোলপাড় হয়।
মৃতার নাম সুপর্ণা মিদ্দে। ২৬ বছরের সুপর্ণা দেবীকে বুধবার বারুইপুর হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। বাড়ির লোক অবশ্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন। পরিবারের এক সদস্য গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেছেন, চিকিৎসক মোবাইল দেখায় ব্যস্ত ছিলেন বলেই সুপর্ণা মিদ্দেকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ডাক্তার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে তাঁকে বাঁচানো যেত। কীভাবে একজন চিকিৎসক এত অমানবিক হতে পারেন, ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। শুক্রবারই চিকিৎসকের কাজে গাফিলতি ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ তুলে বারুইপুর থানায় এফআইআর করেছেন সুপর্ণা মিদ্দের স্বামী দিব্যেন্দু মিদ্দে। তার আগে গতকাল দিনভর হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান রোগীর বাড়ির লোক ও স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকার যেভাবে হাসপাতালের পরিষেবা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন, তারপরও কিছু কিছু লোকের কারণে বদনাম হয়ে যাচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার।

[আরও পড়ুন: ঘুমের ওষুধ স্প্রে করে দিঘার হোটেলে চুরি, সর্বস্ব খোয়া গেল পর্যটকের]
ঘটনার সুত্রপাত বুধবার বিকেলের পর। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বারুইপুর হাসপাতালে ভরতি করা হয় সুপর্ণা মিদ্দেকে। তাঁর স্বামীর নাম দিব্যেন্দু। বারুইপুর থানা এলাকার ধবধবিতে বাড়ি তাঁদের। বারুইপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রাত বারোটা নাগাদ একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন তিনি। এই সন্তানের জন্মের পর থেকেই সুপর্ণা দেবী অসুস্থ হতে শুরু করেন। বাড়ির লোক জানান, ‘নর্মাল ডেলিভারি’ করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচার হয়নি। এর পরেই চিকিৎসকরা বলেন, রোগীর দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রক্ত দরকার। চিকিৎসকের কথা মতো এক বোতল রক্ত নিয়ে আসেন বাড়ির লোক। আরও রক্তের প্রয়োজন বলে জানান। দুপুর গড়িয়ে যায় রক্ত আনতে। স্বামী দিব্যেন্দু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনে। শুক্রবার বারুইপুর থানায় অভিযোগ জানান। ডাক্তার মোবাইলে ব্যস্ত থাকায় কর্তব্যে গাফিলতি ছিল বলে এক সদস্যের অভিযোগ।
The post সরকারি হাসপাতালে ফোনে ব্যস্ত চিকিৎসক! গাফিলতিতে মৃত্যু প্রসূতির appeared first on Sangbad Pratidin.