অভিরূপ দাস: বয়স মেরেকেটে বারোমাস। ওজন সাত কেজি। পেটে এক কেজি ওজনের কর্কট-টিউমার। এক বছরের সেই শিশুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনল এসএসকেএম (SSKM)।
মাস তিনেক ধরেই কিছু খেতে পারছিল না উলুবেড়িয়ার রিপন গোলদার (নাম পরিবর্তিত)। ভরতি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের শিশুশল্য বিভাগে। শিশুশল্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সুজয় পাল এবং ডা. ঋষভদেব পাত্রর অধীনে ভরতি হয় শিশুটি। চিকিৎসকরা জানান, ডানদিকের কিডনিতে টিউমার হয়েছিল শিশুটির। যাকে বলা হয় উইলমস টিউমার। মূলত তা কিডনির এক ধরনের ক্যানসার। পেটের মধ্যে প্রায় এক কেজি ওজনের ওই টিউমারের জেরে শিশুটি কিচ্ছু খেতে পারত না। পেটের মূল শিরা বা ইনফেরিওর ভেনা কাভা আঁকড়ে ধরে রেখেছিল টিউমারটি।
[আরও পড়ুন: রাজ্য মন্ত্রিসভায় ৫-৬ নতুন মুখ, রদবদল হবে বুধবার, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী]
হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর চিকিৎসকরা ঠিক করেন, টিউমারটিকে আকারে ছোট করা হবে। তারপর তা বের করা হবে। সেই জন্যই মাস তিনেক কেমোথেরাপি চলে শিশুটির। কেমোথেরাপির মাধ্যমে টিউমারটিকে আকারে ছোট করার চেষ্টা করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যদিও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। শেষমেশ অস্ত্রোপচার করে বার করা হয় টিউমারটি। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সুজয় পাল ছাড়াও অস্ত্রোপচারে ছিলেন ডা. অরিন্দম ঘোষ, ডা. দেবজ্যোতি শাসমল, ডা. দেবরাজ মুখোপাধ্যায়। শিশুর অ্যানাস্থেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. সঙ্গীতা মণ্ডল, ডা. স্নিগ্ধদেব ঘোষ।
বড় বেদানার আকারের টিউমারটি পেটের মূলশিরার উপর দিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক যন্ত্রণা হচ্ছিল শিশুটির। দেশে তো বটেই, এ রাজ্যের শিশুদের কিডনির ক্যানসারের মধ্যে অন্যতম এই উইলমস টিউমার। চিকিৎসা পরিভাষায় একে নেফ্রোব্লাস্টোমা-ও বলা হয়। ডা. সুজয় পাল জানিয়েছেন, শিশুদের পেটের সব টিউমারের মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশ এই উইলসম টিউমার। ডাব্লু টিওয়ান ডাব্লু টি-টু জিনের চরিত্রগত পরিবর্তনের ফলেই কিডনির এই ক্যানসার দেখা যায়। এসএসকেএম সূত্রের খবর, টিউমারটি বাদ দেওয়ার পর ফের তা বায়োপসি করার জন্য পাঠানো হয়েছে। সমীক্ষা বলছে দেশে, প্রতি বছর পাঁচশো থেকে ছ’শো জন শিশু উইলমস টিউমারের শিকার। বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচারের খরচ কয়েক লক্ষ টাকা। এসএসকেএম হাসপাতালে তা করতে খরচ হল মাত্র দু’টাকা। প্রায় আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে বাদ দেওয়া হয় টিউমারটি। ডা. সুজয় পাল জানিয়েছেন, শিশুটি এই মুহূর্তে পর্যবেক্ষণে রয়েছে।