কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: চকচকে সোনালী রংয়ের প্রায় সাড়ে তিন ফুটের দেহ টেবিলে শোয়ানো। শরীরে যখন ছুরি-কাঁচি চলছে তখন প্রবল ছটফটানি হিলহিলে দেহটায়। মুঠো ফসকে একবার বেরিয়ে এলে বিষের থলি উজাড় করতে খুব বেশি হলে কয়েক সেকেন্ড লাগবে। যমের দক্ষিণ দুয়ার কেউ আটকাতে পারবে না।সাড়ে তিন ফুটের সেই মৃত্যুদূতটিকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনাটাই ছিল বনদফতরের চ্যালেঞ্জ। সেই কাজ ভালভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক। সফল অপারেশনের (Operation) পর পূর্ণবয়স্ক বিশাল আকারের চন্দ্রবোড়াটি খাঁচার মধ্যে ধীরে হলেও চলাফেরা শুরু করেছে। দিনকয়েকের মধ্যে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা। পুরো ঠিক হয়ে গেলে তাকে ফের প্রকৃতির মাঝে ছেড়ে আসা হবে। আপাতত সেটির ঠিকানা ওয়াইন্ড লাইফ রেস্কিউ অ্যান্ড ট্রানজিট ফেসিলিটি সেন্টার। সল্টলেকের এই ব্লকের বনদপ্তরের অফিস সেটি।
ওই অফিসের অপারেশন থিয়েটার কাম ডিস্পেনসারি ঘরের অপারেশন টেবিলে ফেলে সাপটির (Snake) পিঠের অস্ত্রোপচার হয়েছে শুক্রবার। তিন ইঞ্চি গভীর ক্ষতে সেলাই পড়েছে। চলছে নিয়মিত ড্রেসিং সঙ্গে পাঁচদিনের অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনের কোর্স। লোকাল অ্যানেসথেশিয়া করে সাপটির অপারেশন হয় করা হয়। বনদপ্তরের পশু শল্যচিকিৎসক কল্যাণকুমার চক্রবর্তী অস্ত্রোপচার করেন। তিনি বলেছেন, “শারীরিক অবস্থা ভালর দিকে। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: গরু পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত এনামুলের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ হাই কোর্টের]
নিয়মমতো বিষধর প্রাণী যদি বনদপ্তর উদ্ধার করে তাহলে সেটিকে নির্বিষ করা হয় না। চন্দ্রবোড়াটির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানা হয়েছিল। যার ফলে অপারেশন টেবিলে যদি কোনওভাবে হাত ফসকে সেটি ছোবল তুলত তাহলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিত। তবে তিনজনের একটি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত টিম সাপটিকে ধরে রেখেছিল এমনভাবে যাতে সে ছুরি কাঁচির আঘাত সত্ত্বেও খুব বেশি নড়াচড়া না করতে পারে। তার পাশাপাশি লোকাল অ্যানেসথেসিয়া করা হয়েছিল বলে সাপটি খুব বেশি যন্ত্রণা অস্ত্রোপচারের সময় অনুভব করেনি।
মঙ্গলবার গড়িয়ার শচীন্দ্রপল্লি থেকে চন্দ্রবোড়াটি উদ্ধার করেন বনদপ্তরের কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনু দাস সাপটিকে দেখার পর ইন্টারনেট ঘেঁটে বনদপ্তরের টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করেন দুপুর দেড়টা নাগাদ। তার খানিকক্ষণ পরে সল্টলেক থেকে চারজনের একটি টিম গিয়ে সাপটি উদ্ধার করে। সেটির পিঠে প্রায় তিন ইঞ্চির মতো ক্ষত। রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে ঢেকে দিয়েছে জায়গাটি। কোনও কিছু দিয়ে সেটিকে মারা হয়েছিল, নাকি অন্য কোনওভাবে আঘাত লেগেছে তা এখনও স্পষ্ট নয় বনকর্তাদের কাছে। বনদপ্তরের সল্টলেকের রেঞ্জ অফিসার মনোজ কুমার জশ বলেছেন, “আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। স্টিচ করার ফলে সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।” এখন চন্দ্রবোড়াটিকে শুধুমাত্র ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। খাবার খাওয়ার মতো সুস্থ হয়ে উঠলে ছোট আকারের ইঁদুর বা ব্যাঙ খেতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মনোজবাবু।