shono
Advertisement

সাক্ষাৎ ঈশ্বর, সিজারের পর সদ্যোজাতকে বাঁচাতে ডাক্তার নিজেই ছুটলেন হাসপাতালে

সদ্যোজাতের প্রাণ বাঁচাতে রাতভর গাড়ি নিয়ে চক্কর কাটলেন সারা শহর। The post সাক্ষাৎ ঈশ্বর, সিজারের পর সদ্যোজাতকে বাঁচাতে ডাক্তার নিজেই ছুটলেন হাসপাতালে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:06 PM Aug 25, 2020Updated: 12:06 PM Aug 25, 2020

গৌতম ব্রহ্ম: কথায় বলে, পীড়িতের কাছে প্রকৃত চিকিৎসক দেবদূতের সমান। নেহাত যে কথার কথা নয়, হাতে-কলমে তার অনন্য নজির রাখলেন এ শহরের এক চিকিৎসক। প্রসববেদনায় কাতর বধূকে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গাড়ি করে তুলে এনে হাসপাতালে ভরতি শুধু নয়, সিজার করে প্রসূতিকে বিপন্মুক্ত করলেন। তারপর সদ্যোজাতের প্রাণ বাঁচাতে রাতভর গাড়ি নিয়ে চক্কর কাটলেন শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা। ‘মানবিক’ হতে গিয়ে এক সরকারি হাসপাতালে দুর্ব্যবহারও জুটেছে। কিন্তু কর্তব্যে অবিচল থেকে শেষ পর্যন্ত সদ্যোজাতকে ভরতি করেছেন বেলেঘাটার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। এমনকী, বাচ্চার বাবা নিরক্ষর হওয়ায় মধ্যরাতে শিশুর অভিভাবক হয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতেও কসুর করেননি। মানবিকতার এ হেন নিদর্শন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন বিসি রায়ের ডাক্তারবাবুরা। তাঁরা একবাক্যে জানিয়েছেন, এমনটি প্রথম দেখলেন। সিজার করার পর ডাক্তার নিজে সদ্যোজাতকে কোলে করে হাসপাতালে এসেছেন, এমন আর দেখা যায়নি।

Advertisement

ডাক্তারবাবুর তৎপরতায় যমের মুখ থেকে ফিরে এসেছে শিশু। সুস্থ রয়েছেন শিশুর মাও। সপ্তাহে দু’দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামে রোগী দেখতে যান ডা. কৌশিক রায়চৌধুরি। গত ১৯ আগস্ট উস্তির সংগ্রামপুর থেকে একটি ফোন পান। জানতে পারেন, শ্যামলী প্রামাণিক নামে এক প্রসূতির তীব্র প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। বাচ্চাও নড়ছে না। দেরি না করে নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সংগ্রাপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শ্যামলীকে গাড়িতে তুলে বেহালার এখটি নার্সিংহোমে নিয়ে আসেন। সিজার করেন। এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন শ্যামলী। কিন্তু জন্মের অব্যবহিত পরেই প্রব্যল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় শিশুর। ঘণ্টা খানেকের চেষ্টাতেও শ্বাসকষ্ট না কমায় ফের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কৌশিকবাবু। প্রসূতির অ্যাটেন্ড্যান্ট ও স্বামীকে নিয়ে প্রথমে যান হাজরার চিত্তররঞ্জন সেবাসদনে।

[আরও পড়ুন : নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কর্মীরা, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়]

কৌশিকবাবু জানিয়েছেন, শিশুর ফুসফুস কাজ করছিল না। ভেন্টিলেশন প্রয়োজন ছিল। তাই চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে আসি। ঘড়িতে তখন পৌনে একটা। নিরাপত্তারক্ষী নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। তুলতেই তিনি ফোঁস করে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন। বলেন, “রাত দুপুরে জ্বালাতে এসেছেন কেন?” সময় নষ্ট না করে কৌশিকবাবু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দোতলায় ওঠার চেষ্টা করেন। সেখানেই কয়েকজন ডাক্তার বসেছিলেন। কৌশিকবাবু জানালেন, “এমার্জেন্সিতে কোনও ডাক্তার ছিল না। দোতলায় ওঠার গেটে বাইরে থেকে তালা ঝোলানো ছিল। সেবাসদনের ডাক্তারবাবুরা জানিয়ে দেন, “এখানে কিচ্ছু নেই। ভেন্টিলেশন নেই।”

এদিকে বাচ্চা ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছে। হাউমাউ করে কাঁদছেন বাবা। গাড়ি নিয়ে এবার কৌশিকবাবু ছোটেন ফুলবাগানে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। সেখানে অবশ্য একদম অন্য ব্যবহার। ডাক্তারবাবুরা ভেন্টিলেটরে শিশুকে রেখে চিকিৎসা শুরু করেন। নতুন জীবন পায় শিশু। কৌশিকবাবু জানালেন, “বাচ্চার বাবা পড়াশোনা জানে না। মাঝরাতে আমাকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট করতে হয়েছে। ভোর পাঁচটায় বাড়ি ফিরেছি। তবু যে বাচ্চাকে বাঁচাতে পারলাম এটাই বড় প্রাপ্তি।” ২২ আগস্ট শ্যামলীকে বি সি রায় হাসপাতালে নিয়ে যান। বাচ্চার মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজন ছিল। সবচেয়ে বড় কথা রোগীর পরিবার গরিব হওয়ায় এক টাকাও নেন নি ডাক্তারবাবু। শ্যামলীর পরিবার জানালেন, ভগবানেরও আগে ডাক্তারবাবুকে রাখব। উনি না থাকলে মা—সন্তান কেউই বঁচাত না।

[আরও পড়ুন : পুজোর আগেই সুখবর! কালনা-শান্তিপুর সেতুর জমি জট কাটতে পারে সেপ্টেম্বরে]

The post সাক্ষাৎ ঈশ্বর, সিজারের পর সদ্যোজাতকে বাঁচাতে ডাক্তার নিজেই ছুটলেন হাসপাতালে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement