স্টাফ রিপোর্টার: কথা জড়িয়ে যেত প্রায়ই। গা করেননি। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে আচমকাই বুকে ব্যথা। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতেই চিকিৎসকরা বললেন, স্ট্রোক। একজন দু’জন নয়, বাংলায় এমন মানুষের সংখ্যা অগুনতি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাই যে করান না বাংলার সিংহভাগ মানুষ। চোখের কোল ফুলে গেলেও তার গুরুত্ব বোঝেন না বাংলার ৬১ শতাংশ জনতা। বোঝেন না এটা কিডনির অসুখের লক্ষণ।
মারাত্মক এ তথ্য ধরা পড়েছে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ার (অ্যাসোচেম) ‘ইলনেস টু ওয়েলনেস’ প্রোগ্রামে। সেখানেই উঠে এসেছে চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য। থট আরবিট্রেজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামক এক সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল অ্যাসোচেম। দেশের ২১টি রাজ্যের ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬৭২ জনের উপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। সেখানেই দেখা গিয়েছে বাংলার আমজনতা আক্রান্ত নন কমিউনিকেবল অসুখ-এ। সমীক্ষায় প্রকাশ, বাংলার ৬১ শতাংশ মানুষ বছরে একবারও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান না। মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষ বারো মাসে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
[আরও পড়ুন: করোনা কালে মেনুতে থাকুক শাপলা, জলজ এই ফুলেই ভরসা চিকিৎসকদের]
কী এই নন কমিউনিকেবল অসুখ?
ছোঁয়াচে নয়, কিন্তু ভয়াল এমন কিছু অসুখকে নন কমিউনিকেবল ডিজিজের তালিকায় ফেলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যার মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, কিডনির অসুখ, ডায়বেটিস, ক্যানসার, আর্থারাইটিস। এহেন অসুখগুলোর পিছনে রয়েছে কিছু সাধারণ কারণ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তে মাত্রাধিক কোলেস্টেরল, ধূমপান, তামাক চিবানোর অভ্যেস, সপ্তাহে ৫ দিনের কম এক্সারসাইজ, সুষম খাবারের অভাব স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজন, অত্যধিক ডিপ্রেশন, ধমনির অসুখ অথবা অতিরক্ত মদ্যপানের কারণেই মাথাচাড়া দিচ্ছে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ। এর মধ্যে কোনও একটি থাকলেই বছরে অন্ততপক্ষে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর নিদান দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথায়, যত বেশি বাড়তি চিন্তা, তত বেশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সেখান থেকেই ডায়বেটিস, হৃদরোগ।
[আরও পড়ুন: কে বলে কান্না খারাপ? চোখের জল ফেলে স্বস্তি পেতে তৈরি হল ‘ক্রাই রুম’!]
সাধারণত হৃদরোগ অথবা কিডনি বিকল হওয়ার আগে ইঙ্গিত দেয় শরীর। কিন্তু নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা না করানোয় টের পান না অধিকাংশই। ফাস্ট ফুড খাওয়াতেও জাতীয় গড়কে টেক্কা দিয়েছে বাংলা। অ্যাসোচেমের সমীক্ষায় প্রকাশিত, দেশের ৪১.৩ শতাংশ মানুষ বছরে নিয়মিত চপ, কাটলেট, কচুরি, রোল খান। বাংলায় তা ৪৪.৬ শতাংশ।
তবে সমীক্ষায় ধরা পড়েছে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিতও। দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে বাঙালিরা। শুধু তাই নয়, দেশের তুলনায় বাংলায় শাকাহারী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। নিয়মিত নিরামিষ খান, এমন মানুষ দেশে ৬২ শতাংশ, সেখানে বাংলায় ৭৪ শতাংশ মানুষ নিয়মিত শাক-সবজি খান। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘজীবনের রহস্য লুকিয়ে আছে নিরামিষ খাবারের মধ্যে। এ কারণেই বাঙালিদের গড় আয়ু দেশের জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি।