অভিরূপ দাস: দু’ পাশ গোল। মাঝখানটা সরু। গলার মধ্যে সেই ‘ডাম্বেল’ বন্ধ করে দিয়েছিল খাওয়াদাওয়া। শ্বাসনালি ঠেলে একপাশে সরিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট। বছর বত্রিশের মৌমিতা রায়চৌধুরির গলার স্বর শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিল নিজের সন্তানও। “এটা মা না অন্য কেউ।” কী হয়েছে? রোগীর মুখের ভিতরটা দেখে শিউরে ওঠে বাড়ির লোক। অবশেষে বিপন্মুক্ত রোগী।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু পাঁজার অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা। রোগীর গলা পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, সল্টলেকের ওই মহিলার গলায় ডাম্বেল আকৃতির মাংসপিণ্ড ছিল। ১৬ সেন্টিমিটার লম্বা। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় ‘লাইপোসারকোমা’ (liposarcoma)। এই টিউমার এমনিই বিরল। সফট টিস্যু সারকোমার মধ্যে মোটে এক শতাংশ এই ধরনের রোগী। মৌমিতাদেবীর গলার যে অংশে এই টিউমার হয়েছিল তা বিরলতম। চিকিৎসকদের দাবি, এখনও পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র নথিভুক্ত তিনশো রোগীর মধ্যে এহেন টিউমার দেখা গিয়েছে। ফ্যাট সেল দিয়ে তৈরি হয় এহেন টিউমার।
[আরও পড়ুন: বেসরকারি বাসে বাড়তি ভাড়া রুখতে কড়া দাওয়াই পরিবহণ মন্ত্রীর, মানতে ‘নারাজ’ মালিকপক্ষ]
মৌমিতাদেবীর গলার মধ্যে বাড়তে বাড়তে তা আটকে দিয়েছিল শ্বাসনালির রাস্তা। এহেন টিউমার কাটতে চোয়ালের হাড় কাটাই দস্তুর। করতে হয় ট্র্যাকিওস্টমি। অপারেশনের জটিলতা আন্দাজ করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল রোগীর পরিবার। কিন্তু শেষমেশ তার প্রয়োজন হয়নি। টানা আড়াই ঘণ্টার যে অস্ত্রোপচারে পুরো টিউমারটাই বাদ দেওয়া হয়েছে তার নাম ট্রান্সসার্ভাইকাল অ্যাপ্রোচ।
গলার কাছে একটা গোল্লা। তারপর সরু। গলার ভিতর দিয়ে কিছুটা গিয়ে ফের একটা গোলাকার মাংসপিণ্ড। চিকিৎসকের কথায় ডাম্বেল আকৃতির টিউমারটা মস্তিষ্কের ভিতরে প্রবেশ না করলেও বর্ডার পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আপাতত টিউমারটি পুরোটাই বাদ দেওয়া হয়েছে। ডা. শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন, রোগী কথা বলতে পারছেন। খেতেও পারছেন স্বাভাবিকভাবে। যেহেতু টিউমারটি কারসিনোজেনিক তাই প্রয়োজনে আগামী দিনে কেমোথেরাপি অথবা রেডিয়েশন দেওয়া হবে ওই রোগীকে।