স্টাফ রিপোর্টার: কয়েকশো ক্রোশ পেরিয়ে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে ছটফটে এক তরুণী। যাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে মাস্টারদা বলেছিলেন, “এতটা পথ হেঁটে এসেছে তার জন্য কোনও ক্লান্তির চিহ্নই দেখলাম না। চোখেমুখে একটা আনন্দের আভাস দেখলাম।’’ আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম। দর্শনের মেধাবী ছাত্রী। কিন্তু খাতা বই নয়, তাঁকে টেনেছিল বন্দুক, গ্রেনেড। দেশকে মুক্ত করতে হবে যে। এহেন বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে চলচিত্র মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশে। পরিচালক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক প্রদীপ ঘোষ। মুখ্য ভূমিকায় নুসরত ইমরোজ তিশা। এ সিনেমার নেপথ্যে প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ভালবাসার প্রীতিলতা’।
ঠিক হয়েছিল উপন্যাসের নামানুসারে সিনেমার নাম একই হবে। যদিও শেষমেশ সিনেমার নাম ঠিক হয়েছে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’। পরিচালক প্রদীপ ঘোষের কথায়, ”প্রীতিলতা নামটির সঙ্গে বীরকন্যা নামটি যথোপযুক্ত। চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও প্রীতিলতার সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে দুই বাংলা। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ডা. হাসান মাহমুদ চান ভারতেও চলচ্চিত্র মুক্তি পাক। কথা শুরু হয়েছে ভারতের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রকের সঙ্গে। এ চলচ্চিত্র শুটিং হয়েছে ইতিহাসের সেই সব স্থানে যেখানে নব্বই বছর আগে আত্মাহুতি দিয়েছিল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।”
[আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে ভেঙেছে প্রথম বিয়ে, মডেল প্রেমিকার সঙ্গে ফের ছাদনাতলায় হানি সিং!]
১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, রাত দশটায় চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব কেঁপে উঠেছিল প্রচণ্ড বিস্ফোরণে। বন্দে মাতরম ধ্বনিতে গর্জে উঠেছিল কয়েকটি পিস্তল। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন সেই আক্রমণের নেতৃত্বে। শতাব্দী প্রাচীন সেই ইউরোপিয়ান ক্লাবেই শুটিং করেছেন পরিচালক। শুটিং হয়েছে ধলঘাটে, যেখানে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল অগ্নিকন্যার। তবে কোভিডের কারণে কলকাতার বেথুন কলেজে শুটিং করা যায়নি। বাংলাদেশেই তৈরি হয়েছে আস্ত বেথুন কলেজের সেট। ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল এ সিনেমার শুটিং। সে সময় করোনার কারণে বন্ধ ছিল বর্ডার। তাই কলকাতার সমস্ত দৃশ্যই শুট হয়েছে ওপার বাংলায়। পরিচালকের দাবি, সেট এমনই নিঁখুত। দেখলে ঠাওর করতে পারবেন না দর্শকও। ১৯৩১ সালের ৪ অগস্ট বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসি হয়। এই ঘটনা প্রীতিলতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এর পর আরও ন’মাস তাঁকে কলকাতায় থাকতে হয়েছিল বিএ পরীক্ষার জন্য। কলকাতার সে অংশটুকু শুট হয়েছে বাংলাদেশেই। বাংলাদেশ সরকারের তরফে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান নিয়েই এ চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হয়।