shono
Advertisement

Breaking News

ঠান্ডা লাগা নিয়ে বাতিক কিন্তু সুবিধার নয়, সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞ

বিষয়টাকে একদম হালকাভাবে নেবেন না।
Posted: 04:40 PM Mar 13, 2024Updated: 04:48 PM Mar 13, 2024

কটা হাঁচি পড়ল, নাক দিয়ে একটু জল গড়াল অথবা কপাল টিপটিপ মানেই ঠান্ডা লেগেছে। পেট খারাপের মতো ঠান্ডা লাগার বাতিকেও আক্রান্ত অধিকাংশ। ব্যাপারটা কী এতই মামুলি? এই বিষয় নিয়েই বিশেষ প্রতিবেদন পালমোনলজিস্ট ডা. সুমিত সেনগুপ্তর। লিখলেন জিনিয়া সরকার

Advertisement

কারও কারও বারোমাসই, উঠতে-বসতে ঠান্ডা লাগে। ঠান্ডা খেলে, ঠান্ডায় শুলে, ঠান্ডায় দাঁড়ালে কিংবা ঠান্ডা জল গায়ে ঢাললে, ঠান্ডা মৃদুমন্দ বাতাসে হাতে হাত রাখলে সবেতেই পিছু নেয় ঠান্ডা লাগা। বারোমাস লেগে থাকে সমস্যা। হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া, হালকা গা ম্যাজম্যাজ শুরু। তাই ঠান্ডা লাগার ব্যাপারে রাজ্যবাসী তথা এদেশের মানুষজন এত বেশি সচেতন যে, টাইয়ের চেয়েও গলার মাফলারটা বেশি পছন্দের।

দুর্গাপুজো যেই শেষ হল, ব্যস! মাফলার জড়ানো জীবন শুরু। তারপর হেমন্তের শীত যায়, বসন্তের মিঠে হাওয়া বয় কিন্তু গলায় মাফলার রয়েই যায়। ওটাই যেন রক্ষাকবচ। ওই যে, পিছনে রেড অ্যালার্ট যদি ঠান্ডা লেগে যায়! বাবা-মা, দাদু-ঠাকুমা থেকে বাড়ির ছোটরা, ঠান্ডার ভয়ে প্রতিপদে সাবধান। ঠান্ডা জলে স্নান নয়, আইসক্রিম নয়, ট্রেনে-বাসে জানালার ধারে বসা নয়, আর কত কিছুতে এই নয় পিছু ছাড়ে না। আরও আশ্চর্যের, ঠান্ডার জায়গায় বেড়াতে গেলে ব্যাগ ভর্তি শীতের পোশাক নিয়েও ক্ষান্ত হন না অনেকেই। দু-চারটে আগে থেকেই গায়ে জড়িয়ে নেন। ঠান্ডা লাগা আটকাতেই হবে। ব্যাপারটা আগে বুঝুন। না বুঝে এত বেশি ভয় পাওয়াটাও যেমন একটা বাতিক, তেমনি সব কিছুর পিছনেই ঠান্ডা লেগেছে ভেবে অসুখের নিজের মতো চিকিৎসা করাটাও একদম ঠিক নয়।

ঠান্ডা লাগে না, তাহলে কী হয়?
সাধারণত এই ধরনের চলতি ঠান্ডা লাগা, যা থেকে অল্পতেই হাঁচি-নাক দিয়ে জল পড়া শুরু হয় তা কিন্তু কোনও অসুখ নয়। এটা হওয়ার কারণ শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমের জন্য।
ধরুন, যেসব দেশে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি শীতকালে তাপমাত্রা থাকে, সেখানে থাকা কোনও ব্যক্তির বেশি ঠান্ডা হাওয়া ফুসফুসে পৌঁছলে প্রাণ রাখা সংশয়, তাই শরীর নাক বন্ধ করার চেষ্টা করে। এটিকে ভেসোমোটররিফ্লেক্স বলে। এ সব ক্ষেত্রে প্রথমেই ঠান্ডায় বেরলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ শরীর নিজে থেকেই প্রতিরক্ষার জন্য এই ঠান্ডা ঢোকার পথে বাধার সৃষ্টি করে। নাক দিয়ে জল পড়ার অর্থ, মানুষকে এটা বোঝানো যে নাক দিয়ে বাইরের ঠান্ডা ঢুকলে, নাকটা চাপতে হবে। অর্থাৎ এই ডিফেন্স মেকানিজমের জন্যই ঠান্ডায় এমন উপসর্গ দেখা দেয়। এটাকে অসুখ মনে করা একেবারেই ভুল। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সঙ্গে বাইরের তাপমাত্রার হেরফের হলে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি মাত্র। এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যে অথবা খুব বেশি হলে এক দিন পরেই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।

থার্মোমিটারে পারদ চড়ছে! সেক্ষেত্রে কী হচ্ছে?
এই ধরনের উপসর্গ থাকলে, অর্থাৎ সর্দি-জ্বর, তার সঙ্গে এর এক-দুদিনের মধ্যে কাশি শুরু হলে বুঝতে হবে ভাইরাল ইনফেকশন থেকে সমস্যা হচ্ছে। সাধারণত ভাইরাল রেসপিরেটরি ট্র‌্যাক্ট ইনফেকশন হলে তা থেকে এমন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্কের বছরে ৪ বার এই সংক্রমণের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। শিশু ও ষাটোর্ধ্বদের বছরে ৬ বারও হতে পারে।

সব সময় যে এই ভাইরাসজনিত সংক্রমণে একই উপসর্গ থাকবে তা নয়। কখনও নাক বন্ধ হতে পারে, কখনও কান বন্ধ হতে পারে, গলা ব্যথা, কখনও আবার হাঁচি, খুব কাশি দেখা দেয়।
এই সমস্যা কোনও ঠান্ডা হাওয়া বা ঠান্ডা খাওয়ার জন্য নয়। এটা সাধারণত অন্যের হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে সমস্যা শুরু হয়।

আরও একটা ব্যাপার, এই সমস্যা সাধারণত তিন দিন থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। বিশেষত কাশি অনেকদিন পর্যন্ত ভোগায়। এই ধরনের ভাইরাল সংক্রমণ থেকে কিন্তু শিশুরা ও বয়স্করা বেশি ভোগেন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইন্ফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ পড়ে। এছাড়া রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস, মেটা নিউমো ভাইরাস, করোনা ভাইরাস থেকে এমন উপসর্গ দেখা দেয়।

[আরও পড়ুন: পথের ক্লান্তি ভোলাবে কালুকের এই রূপ, মনকে দেবে শান্তি]

সিজন চেঞ্জ
সাধারণত বর্ষাকালে, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে ও শীত চলে গিয়ে গরম যখন পড়ছে এই সময়টায় কাশি-সর্দি হলে ঠান্ডা লেগেছে বলে চুপচাপ তা ফেলে রাখবেন না। বা নিজের মতো অ্যান্টি অ্যালার্জিক খেয়ে রোগ চেপে রাখবেন না। অধিকাংশই মানুষই ঠান্ডা লাগা ভেবে এগুলোকে অবহেলা করেন। যার পরিণতি কিন্তু মারাত্মক হতে পারে।

সিঁদেল চোর অ্যালার্জি
সাধারণত একই উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পায় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এক্ষেত্রেও কিন্তু একটু ঠান্ডা হাওয়ায় হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া শুরু হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু বিশেষ ট্রিটমেন্ট দরকার। আবার ঘরের মধ্যে থাকা ধুলোতে অনেকের অ্যালার্জি হয়। সাধারণত ঘরে কোনও ধুলো ঝাড়লে, ধুলোয় বেরোলে অ্যালার্জি থেকে হাঁচি, সর্দির সমস্যা শুরু হয়ে যায়। প্রায়ই এমন হতে থাকে, কোনও রকম ঠান্ডার সংস্পর্শ ছাড়াই। এমন হলে সাবধান হতে হবে।

নিউমোনিয়ার আনাগোনা
বুকে সর্দি ও কাশি থাকলে সব সময় তা মামুলি ঠান্ডা লাগা ভেবে ফেলে রাখা ভুল। একটা ব্যাপার সকলকে জানতে হবে, নিউমোনিয়ায় কিন্তু নাক দিয়ে জল পড়ার লক্ষণ থাকে না। গলা ব্যথাও থাকে না। সাধারণত ব্যাকটিরিয়া থেকে নিউমোনিয়া হয়। আবার খুব খারাপ ভাইরাস থেকে কোনও সংক্রমণ হলে, তার পরবর্তী ৭-১০ দিনের মাথায় কারও কারও সেই ভাইরাসের মধ্যেই সেকেন্ডারি ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন হয়। তখন কাশি কমতে কমতে হঠাৎ দেখা যায় আবার বাড়ে, জ্বর আসে। এমন হওয়া মানে নিউমোনিয়ার উপসর্গ বুঝতে হবে। তখন অসুখ ফেলে রাখলে বিপদ।

ধাতকে ধ্যাত বলুন
অসুখ ধাতে আছে মানে সেই অসুখকে লঘু চোখে দেখা। সেটা ঠিক নয়। আসল কারণ হল একজনের ইমিউনিটি পাওয়ার। সাধারণত এই ধরনের সংক্রমণ তাদেরই বেশি হয় যাদের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।শিশু ও বয়স্করা এই কারণে বেশি আক্রান্ত হন। এছাড়াও যাঁদের হার্ট, ফুসফুস, কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিস থাকে তাঁদেরও সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। তাই এগুলো থাকলে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। তাহলে দেখবেন ধাত বদলে গেছে। কথায় কথায় সমস্যা গায়েব হবে।

সাবধান হবেন কখন?
ভাইরাস থেকে নাক-গলায় লক্ষণ দেখা দেয়। জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব ও সঙ্গে কাশি হয়।
নিউমোনিয়া হলে শুধু কাশি, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা প্রকাশ পায়। জ্বর থাকে অনেকদিন। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যান।
আর যদি অল্প সর্দি, গা ম্যাজম্যাজ করে, সেক্ষেত্রে ১-২ দিন চেপে রাখুন, অসুবিধা নেই। পারলে গরম স্টিম নিন, মধু-তুলসীপাতা খান, কাড়া বানিয়ে গরম জলে দারচিনি, লবঙ্গ, আদা ফুটিয়ে পান করুন। গরম স্যুপ খান। খুব প্রয়োজন হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তাহলেই আস্তে আস্তে কমে যায়।
সমস্যা কমতে কমতে আবার হঠাৎ বাড়তে থাকলে তখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
অ্যালার্জির সমস্যার সঙ্গে ভাইরাল ইনফেকশন হলে তখন সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। তাই সাবধান থাকতে হবে।
ভিড় বাস, স্ট্রেনে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।
খুব ঠান্ডা জায়গায় গেলে নাক বন্ধ রাখুন। খুব এসিতে না থেকে মাঝারি ঠান্ডায় থাকুন।
আর জ্বর, সর্দিতে অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। ভাইরাল ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই।

ভ্যাকসিনে প্রতিরোধ
ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ প্রতিহত করতে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ৬৫ ঊর্ধ্ব বা তার কম বয়সে যদি হার্ট, ফুসফুস, কিডনি ও লিভারের সমস্যা থাকে তাহলে প্রত্যেকের এই ভ্যাকসিন নিতে হবে।
নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন (নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন) ৬৫ ঊর্ধ্বদের নিতে হবে। প্রথমটি নেওয়ার একবছর পর দ্বিতীয় ভ্যাকসিনটি নিতে হবে। তাহলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিও কমে।

[আরও পড়ুন: চেহারার কালো ছোপ দূর করতে পার্লারে ছুটছেন? ভুল করছেন না তো!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement