ধীমান রায়, কাটোয়া: নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়…। মাথার উপর খড়ের চাল। বাঁশের বেড়া দেওয়া একটি ঘর। সেই ঘরেই গর্বের দিনযাপন পঞ্চায়েত উপপ্রধানের। শুধু তিনি একা নন, স্বামী, দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। সকলকে থাকতে হয় এই একটিমাত্র ঘরেই। কাটোয়ার (Katwa) শিঙ্গি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাখি ধাড়া। তাঁর পরিবার আবাস যোজনা এখনও পায়নি। প্রকল্পের তালিকায় নামও নেই। তবে কোনও আক্ষেপ নেই রাখিদেবীর। বরং তিনি নিয়মিত এলাকায় ঘুরে ঘুরে নাগরিকদের খবর রাখছেন। যঁারা আবাস যোজনা প্রকল্প পাওয়ার যোগ্য তাঁদের জন্য তদ্বির করছেন।
রাখিদেবীর কথায়, ‘‘আমার এলাকায় এমন কয়েকটি পরিবার রয়েছে, যাদের অবস্থা আমাদের মতোই বা আমাদের থেকেও খারাপ। আমি চাই, তারা যেন আগে ঘরের অনুদান পায়। তাছাড়া যতদিন উপপ্রধান রয়েছি ততদিন নিজেদের পরিবারের জন্য আবাস প্রকল্পে আবেদন করতেও চাই না। পরে দেখা যাবে।’’
[আরও পড়ুন: ব্রাজিলে তাণ্ডব অনুগামীদের, ফ্লোরিডার হাসপাতালে ভরতি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো]
উপপ্রধানের স্বামী মিলন ধাড়া পেশায় জনমজুর। ছেলে রূপঙ্কর নবম ও মেয়ে কোয়েল তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। মিলনবাবু বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী উপপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর পঞ্চায়েতের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মূলত আমার রোজগারেই সংসার চলে। খাওয়া-পরা সামলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানো কষ্টের হয়ে পড়ে। তাই ঘরবাড়ি কিছু করতে পারিনি।’’
মালঞ্চ গ্রামের তৃণমূলের ৫ নম্বর বুথ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, ‘‘উপপ্রধান বাড়িতে রান্নার কাজ সেরে এলাকায় এলাকায় ঘোরেন। পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় প্রতিটি সংসদে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর রাখেন। কেউ পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট, কেউ বিভিন্ন প্রকল্প বা আবাস যোজনার জন্য অনুরোধ করেন। উপপ্রধান তাঁদের যথাযথ সহায়তা করেন। কিন্তু নিজের পরিবারের জন্য আবাসের আবেদন করেননি।’’ উপপ্রধান বলেন, ‘‘অভাব আছে ঠিকই, কিন্তু যখন সাধারণ মানুষের সেবার জন্য দায়িত্ব নিয়েছি, ততদিন নিজেদের সুবিধা-অসুবিধাকে বেশি গুরুত্ব দিলে চলবে না। মানুষের পাশে থাকতে চাই।’’