সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে অক্সিজেনের অভাবে একের পর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। বকেয়া টাকা না মেটানোয় অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের এক চিকিৎসক অসম লড়াই না চালালে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত বলে মনে করা হচ্ছে। গভীর রাতে হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরা যখন ঘুমে মগ্ন, তখন শিশুদের জন্য অক্সিজেনের জোগান অব্যাহত রাখতে সারারাত দু’চোখের পাতা এক করেননি এই ডাক্তার।
গোরখপুরের হাসপাতালে বিপর্যয়ের পর প্রকাশ্যে এসেছে ডাক্তার কাফিল খানের এই অনন্য কীর্তি। অক্সিজেনের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বলতে গেলে প্রায় একাই ছোটাছুটি করেছেন রাতভর। তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সব শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি অবশ্য। জাপানি এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যেই ৩০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০। যদিও অক্সিজেনের অভাবেই ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্য প্রশাসন। আজ ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। রাত দু’টো নাগাদ হাসপাতালের কর্মীরা এসে ডাক্তার কাফিল খানকে জানান, হাসপাতালের অক্সিজেন ফুরিয়ে এসেছে। যেটুকু অক্সিজেন রয়েছে, তাতে বড়জোর আর এক ঘন্টা সরবরাহ অব্যাহত রাখা যাবে। এই কথা শুনে এক মুহূর্তও দেরি করেননি ডাক্তার কাফিল। বুঝতে পারেন, এত রাতে সরকারি নিয়মকানুন মেনে অক্সিজেন পেতে দেরি হয়ে যাবে। তাই তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বন্ধুদের ফোন করে ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে আনেন হাসপাতালে। ফোন করেন ‘স্বশস্ত্র সীমা বল’-এর ডিআইজিকেও। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেখান থেকে জোগাড় করা হয় ১০টি সিলিন্ডার।
কিন্তু মাত্র ২২টি অক্সিজেন সিলিন্ডারে আর কতক্ষণ যমে-মানুষে টানাটানি আটকানো যায়? তবু লড়াই থামাননি ডাক্তার কাফিল ও অন্যান্য জুনিয়র ডাক্তাররা। জেলার এক সিনিয়র ডাক্তারের কাছ থেকে ছ’টি অতিরিক্ত সিলিন্ডার আনানো হয় সকালে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নগদ টাকার বিনিময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে রাজি হলে ডাক্তার কাফিল তাঁর এটিএম কার্ড দিয়ে দেন ওই ব্যবসায়ীকে। ট্রাকে করে আনা হয় বাড়তি অক্সিজেন সিলিন্ডার। তার ভাড়াও মেটান ওই চিকিৎসকই। ফোন যায় জেলার অন্যান্য হাসপাতালে। কিন্তু এত লড়াই করেও শিশুদের মৃত্যু আটকানো যায়নি। তবে সংখ্যাটা যে অনেকটাই কমিয়ে আনা গিয়েছে, সে কথা স্বীকার করছেন হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকরা।
The post অক্সিজেনের অভাবে শিশুমৃত্যু রুখতে রাতভর লড়াই এই ডাক্তারের appeared first on Sangbad Pratidin.