অর্ণব আইচ: দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার আহ্বান জানিয়ে গত লোকসভা ভোটে উত্তর কলকাতার প্রার্থী হয়েছিলেন জয়দেব দাস। ‘তরুণ সমাজসেবী’ বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। যুক্ত ছিলেন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও। কিন্তু মাস কয়েকের মধ্যেই আসল চেহারা ফাঁস হয়ে গেল। প্রমাণ পাওয়া গেল, কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গাঁজা, চরস, ইয়াবার মতো মাদক পাচারের মাথা সেই প্রার্থী।
ট্যাংরার মথুরবাবু লেনের বাসিন্দা ওই যুবক ‘ভারতীয় মানবাধিকার পার্টি’ নামে একটি দল তৈরি করে ভোটে দাঁড়ায়। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া খতিয়ানে কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি ও ১৪টি মামলার বিষয় উল্লেখও রয়েছে। সম্প্রতি যোগ দেয় অন্য একটি রাজনৈতিক দলে। সমাজসেবার আড়ালে মাদকের কারবারে ৬ বছরেই কোটিপতি জয়দেব। বাগুইআটিতে গোটা কয়েক ফ্ল্যাট আর প্রচুর অটোর মালিক সে।
[আরও পড়ুন: বাইপাস থেকে টাকা-মোবাইল ছিনতাই, পুলিশের তৎপরতায় ফিরে পেলেন দিল্লির তরুণী]
গত কয়েক মাস ধরে শহরে যত মাদক পাচারকারী ধরা পড়ছিল, তাদের মধ্যে সিংহভাগের কাছ থেকেই জয়দেবের নাম পাওয়া যাচ্ছিল। নিজেকে বাঁচাতে বাড়িতে লাগায় সিসিটিভি। আড়াই বছর ধরে মাদকের পাহারায় পুষেছিল দু’টি হিংস্র কুকুর। কেউ যাতে বাড়িতে না ঢুকতে পারে, তার জন্য বাড়ির দরজায় দু’টি কুকুরের ছবি দিয়ে আটকে রেখেছিল সাবধানবাণী। সারাক্ষণ দুই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে নিয়ে চলত। প্রয়োজনে মা, বোন, ভাগ্নেদের দিয়েও পাচার করাত মাদক।
এসব তথ্য হাতে পেয়ে বুধবার বিকেলে পুলিশ তার বাড়িতে হানা দিতেই কুকুর দু’টিকে ছেড়ে দেয় সে। কুকুর সামলাতে গিয়ে ডগ স্কোয়াডের এক কর্মী আহতও হন। জয়দেব ও তার স্ত্রী গৌরী বাথরুমে গিয়ে পুড়িয়ে দেয় প্রায় বিপুল পরিমাণ গাঁজা। মাদক পাচার, পুলিশকে বাধা, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগে পরে গ্রেপ্তার হন জয়দেব দাস ও তার স্ত্রী গৌরী দাস। বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২২ কেজি গাঁজা ও ১ কিলো ১০০ চরসের মতো মাদক।
[আরও পড়ুন: সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ধার ২০০ বছরের পুরনো সিন্দুক, খুলতে গিয়ে নাজেহাল কর্তৃপক্ষ]
পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভিতে পুলিশের হানার ফুটেজ দেখেই জয়দেব ও গৌরী কুকুর দু’টিকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই তেড়ে আসে রটউইলার ‘টাইসন’ ও ডোবারম্যান ‘রকি’। কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের ‘গার্ড ডগ’ সামলাতে পটু, এমন তিনজন হ্যান্ডলার শুরু করেন ‘কুলিং প্রসেস’। প্রচণ্ড রাগে চিৎকার করতে থাকা কুকুরগুলিকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করেন তারা। অভিযোগ, সেগুলিকে উত্তেজিত করতে বাইরে থেকে জয়দেবের লোকেরা চকোলেট বোমা ফাটাতে থাকে। রটউইলার কুকুরটির গলার বকলেসে দড়ি বাঁধতেই সেটি হ্যান্ডলারের বাধ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু বাধ্য হয়নি হিংস্র ডোবারম্যানটি। সেটিই কামড়ে দেয় হ্যান্ডলার অমিত মণ্ডলের দুই হাতে। ওই অবস্থায় তাঁরা কোনওমতে কুকুরটিকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেন। ডাকা হয় কুকুর বিশেষজ্ঞকে। তাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে পাঠানো হয় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কেনেলে। ধৃত মাদক পাচারকারী দম্পতিকে জেরা করে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
The post সমাজসেবার আড়ালে মাদক পাচার, অবশেষে পুলিশের জালে কোটিপতি দম্পতি appeared first on Sangbad Pratidin.