নিরুফা খাতুন: তালিবান শাসনে কূটনৈতিক সম্পর্ক কী হবে তা নিয়ে ভেবে যখন ঘুম উড়েছিল দেশের আমলাকুলের, তখন খাদ্যরসিকদের উদ্বেগ ছিল অন্য। সেই উদ্বেগ কিছুটা কমল। কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও এখন আবার আফগান ড্রাই ফ্রুটের (Dry Fruit) আমদানি শুরু হওয়ায় সমস্যা কাটিয়ে উঠছে শহরের বাজার এবং হোটেল ও রেস্তরাঁগুলি। পুজোর (Durga Puja 2021) মুখেই দাম কমছে শুকনো ফলের। হাজার টাকার আমন্ড এখন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় মিলছে। ১৬০০ টাকার পেস্তা এখন কমে হয়েছে ১৫০০ টাকা।
আফগান (Afghanistan) থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নিতে উত্তাল হয়ে ওঠে কাবুল। তালিবানদের আতঙ্কে (Taliban Terror) শয়ে শয়ে আফগানরা দেশ ছাড়তে থাকেন। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক লেনদেন। কাবুলিওয়ালার দেশের অশান্তির আঁচ এসে পড়েছিল ভারতীয় বাজারে। এ দেশের ড্রাই ফ্রুটের বাজার জুড়ে রয়েছে আফগানিস্তান। আমন্ড, পেস্তা, কিসমিস, খুবানি, আনজির, মুরাক্কা কাবুল থেকে আসে। এ ছাড়া সে দেশের মূল্যবান হিং, পোস্ত, জাফরান আফগানি মশলা এ দেশের হোটেল ,রেস্তেরাঁগুলো দখল করে রয়েছে। আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে জোগান বন্ধ হয়ে যায় মশলা এবং শুকনো ফলের। মশলার জোগান না মেলায় এখানকার আফগানি রেস্তরাঁ মালিকরা খাবারে স্বাদ ধরে রাখা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: টালা-পলতার ট্যাঙ্কে ঢুকল ডিভিসির ঘোলা জল! কলকাতা ও হুগলিতে পানীয়ের সংকট]
সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়িয়ে ছিল শুকনো ফল। মোগলাই, আফগানি খাবারে শুকনো ফলের ব্যবহার বেশি হয়। এ ছাড়া এখন উৎসবের মরশুম। দুর্গা পুজোর পর রয়েছে দীপাবলি, ভাইফোঁটা। উৎসবের সময় মিষ্টির চাহিদা থাকে। সেজন্য এই সময় বাজারে শুকনো ফলের চাহিদাও বেড়ে যায়। দীপাবলি ও ভাইফোঁটায় উপহার হিসাবে দেওয়া হয় শুকনো ফলের থালি। কিন্তু তালিবান দখলের পর প্রথমদিকে যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছিল এতে মধ্যবিত্ত বাঙালির নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল আমন্ড, কিসমিস, পেস্তা, আনজির। রেস্তরাঁ মালিক থেকে শুরু করে মিষ্টি ব্যবসায়ীদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছিল।
তবে পুজোর মুখে আবার স্বাভাবিক হচ্ছে শুকনো ফলের বাজার। রাজা কাটরা ড্রাইফুটের পাইকারি ব্যবসায়ী পবন কুমার বলেন, “তালিবান দখল নিতেই আফগানিস্তান থেকে শুকনো ফল মশলা এগুলোর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দিল্লির চাঁদনি মার্কেটে আগে থেকে মজুত করা শুকনো ফল নিয়ে এসে কিছুদিন বাজারে জোগান দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু চাহিদা মতো জোগান না থাকায় দামবৃদ্ধি হচ্ছিল। এখন অবশ্য আফগানিস্তান থেকে শুকনো ফল ফের আসছে। এতে কিছুটা দাম কমেছে।” ব্যবসায়ী রাজেশ গুপ্তা বলেন, “কিছুদিন আগে পর্যন্ত কালো কিসমিসের দাম ছিল প্রায় ৪০০টাকা। এখন তা কমে হয়েছে ৩০০টাকা। আনজিরের দামও হাজার টাকা থেকে কমে ৮৫০ টাকা হয়েছে। অবশ্য জাফরান, হিং, পোস্তর দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।” তবে পুজোর মুখে জোগান ঠিক থাকায় এবং দাম কিছুটা হলেও কমায় খুশি রেস্তরাঁ মালিকরা। হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিক সংগঠনের কর্তা সুদেশ পোদ্দার বলেন, “সমস্যা কিছুটা কমল। দুশ্চিন্তার মেঘ সরে গিয়েছে। আমদানি ফের চালু হল। এটাই যথেষ্ট।”