জ্যোতি চক্রবতী, বনগাঁ: জমিদারি হারিয়েছে বহু বছর আগে। আর্থিক অবস্থাও আগের মতো নেই। ফলে পুজোর আয়োজনের ব্যাপকতাও কমেছে৷ তবুও পরম্পরা বজায় রেখে প্রতিবছরই দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2020) আয়োজন হত গোবরডাঙা জমিদার বাড়ি অর্থাৎ প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। কিন্তু করোনার কারণে ছেদ পড়ল পরম্পরায়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলতি বছরে পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল পরিবার। জমিদার পরিবারের সিদ্ধান্তে মুখ ভার গোবরডাঙারবাসীর (Gobardanga)।
প্রায় সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি সময় আগে লখনউ থেকে এসে বাংলাদেশের সারষার সাগরদাঁড়িতে বসবাস শুরু করে প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় পরিবার। সেখানেই পুজোর সূচনা। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্য শ্যামরাম গোবরডাঙার ইছাপুরে এসে ওখানকার জমিদার চৌধুরি পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে তিনি জমিদারির একাংশ পান। তাঁর ছেলে খেলারাম ব্রিটিশ কালেক্টরের হয়ে কাজ করতেন। খেলারাম দুর্গাপুজো পত্তন করেন। এখানে দেবী দুর্গা প্রসন্নময়ী দুর্গা নামে খ্যাত। খেলারাম বাড়ির পাশেই প্রসন্নময়ী কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিপদে ওই কালী মন্দিরে ঘট স্থাপন করা হয়। সপ্তমীতে ওই ঘট আনা হয় বাড়িতে। অতীতে যষ্ঠীর দিন জমিদার বাড়িতে কামান দাগা হত। এলাকার মানুষ বুঝতে পারতেন পুজো শুরু হল জমিদার বাড়িতে। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় থাকত হাতি। প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি সময় এই পুজোর সাক্ষী গোবরডাঙাবাসী। চলতি বছরে পুজো হবে না জেনে স্বাভাবিকভাবেই সকলের মুখ ভার। স্থানীয় বাসিন্দা মানোষ ঘোষালের কথায়, “জমিদার বাড়ির পুজো আমাদের কাছে বার্ষিক উৎসবের মতো। পুজোর দিনে জমিদার বাড়িতে যাওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে৷ এবার পুজো বন্ধ হওয়ায় আমাদের আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল৷”
[আরও পড়ুন: কোভিড আবহে শারদোৎসব, স্বাস্থ্যবিধির বিচারে সেরা পুজোকে পুরস্কৃত করবে সরকার]
জমিদার পরিবারের অষ্টম বংশধর স্বপনপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বললেন, “ছোটবেলায় দেখেছি, আমাদের বাড়ির পুজোয় কত লোক আসতেন। বড় বড় আমলারা আসতেন। চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় দু’বার এসেছেন। পাঁচদিন ধরে বাড়িতে মহোৎসব চলত। করোনা আবহে এবার পুজো হবে না। আমাদের সকলের কাছে বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখের।” জমিদার বাড়ির সদস্য নয়ন প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “তিনশো বছরের ঐতিহ্যবাহী পুজো। পলাশির যুদ্ধ, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, সিপাহি বিদ্রোহের সময়েও আমাদের পুজো বন্ধ হয়নি। এবার আর পারলাম না। করোনা আবহে পুজো আমাদের বন্ধ রাখতেই হচ্ছে। কেবল ঘটপুজো করে নিয়ম পালন করা হবে।”