নব্যেন্দু হাজরা: আশঙ্কা ছিলই। আর তা যে নেহাত অমূলক নয়, তা বাজারে গিয়ে এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আম গেরস্ত। পাইকারি থেকে খোলা বাজার, গড়ে সব সবজির দাম বাড়ল প্রায় ১৫ থেকে ২৫ টাকা। আর ডিম তো ইতিমধ্যেই ১৪ টাকা জোড়া বিকোচ্ছে। আর মুরগির মাংস কেজি প্রতি দুশো টাকা পার করতে চলেছে। শসা থেকে পটল, ঝিঙে আলু সবারই দাম বাড়ল রাতারাতি। দাম বেড়েছে নোনা জলের মাছেরও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতিমধ্যেই মালের যোগান কমেছে। বৃষ্টিতে প্রচুর সবজি জলের তলায়। তার উপর পণ্য আনা নেওয়ার খরচও অনেকটা বেড়ে যাওয়াতেই দাম বাড়ছে প্রচুর। যশে ফসলের ক্ষতির জেরে আরও কোপ পড়েছে আম আদমির পকেটে।
লোকাল ট্রেন বন্ধ। দুই জেলায় জলের তলায় অধিকাংশ সবজি। এক মাসে ডিজেলের দাম বেড়েছে ১৭ বার। আর তাতেই রাতারাতি অগ্নিমূল্য সবজির দাম। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অধিকাংশ কৃষি জমিই চলে গিয়েছে জলের তলায়। সেই জল নামতেই দেখা যাচ্ছে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে ফসলের। বেগুন, ঝিঙে, উচ্ছে, ভেন্ডি কাঁচা লংকা, থেকে শশা, কুমড়ো অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়ায় ঝড়ে সেভাবে ক্ষতি হয়নি। সেখানকার সবজিই এখন আসছে বাজারে। কিন্তু এখন যোগান কমে যাওয়াতেই দাম বাড়তে শুরু করেছে।
[আরও পড়ুন: সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিতে ভিজবে রাজ্য? জেনে নিন কী বলছে হাওয়া অফিস]
একই অবস্থা মাছ বাজারেরও। যশের জেরে সামুদ্রিক মাছের জোগানে টান পড়েছে। এদিকে উত্তরপ্রদেশ-বিহারের গঙ্গায় ভাসছে কোভিডের মৃতদেহ। সেই আতঙ্কে ভিনরাজ্যের নদীর মাছে অরুচি বঙ্গবাসীর। ফলে ভরসা রাজ্যের ভেড়িতে চাষ হওয়া মাছই। যশের দাপটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রচুর ভেড়ির ক্ষতি হয়েছে। তথৈবচ অবস্থা পূর্ব মেদিনীপুরের। সবমিলিয়ে মাছের বাজারে জোগানে টান পড়েছে। আর তার জেরে প্রায় সব মাছেই কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা দাম বেড়েছে। ডিমের দাম মাঝে ৬ টাকা হলেও তা আবার ৭ টাকা পিস হয়েছে। মুরগির মাংস মাঝে কিছুটা দাম কমলেও সেই দাম আবার বাড়ছে। পোলট্রি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি যা তাতে এই মূহুর্তে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে চাষিরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, সন্দেশখালি, পাথরপ্রতিমা, কুলতলী সহ বিস্তীর্ণ অংশে বেগুন, ঝিঙে, কাঁচা লঙ্কা, উচ্ছে, ভেন্ডি চাষ হয়। আর এসব অঞ্চলের অধিকাংশটাই জলের তলায়। অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের বহু জায়গায় করোলা, শসা, চিচিঙ্গা, কাঁচালঙ্কার চাষ হয়। যে জমিতে ফসল ফলে তা এখন জল থইথই অবস্থা হয়েছিল। সেই সবজি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এতদিন যেখানে বেগুন, পটল, ঝিঙে, ভেন্ডি সবই ছিল বাজারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, তাই এখন ৫০-৬০ টাকা কেজিতে। কাঁচা লঙ্কা বিকোচ্ছে ৮০ টাকা কেজি প্রতিতে। ধনেপাতার দাম দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকা।
[আরও পড়ুন: ফেসবুকে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ পোস্ট, এবার জল্পনা মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায়কে নিয়ে]
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, লোকাল ট্রেন খোলা থাকলে যে মাল আনতে হাজার টাকা খরচ হত, সেই পণ্যই গাড়িতে করে আনতে তিন হাজার টাকা চলে যাচ্ছে। তাতেই দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে ডিজেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে গাড়ির ভাড়াও বেড়ে গিয়েছে। তাতেই বেধেছে সমস্যা। এর প্রভাব এসে পড়ছে আম গেরস্তের পাতে। লকডাউনের মধ্যে একমাত্র স্বস্তি দিয়েছিল এই সবজিই। যার দাম তাও কিছুটা সাধ্যের মধ্যে ছিল আম আদমির। কিন্তু তাতেও এবার ছেদ পড়ল। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই যোগান কমেছে সবজির। নদিয়া, আর উত্তর চব্বিশ পরগনায় যে ফসল ফেলেছে তা দিয়েই বাজার ভরছে। যোগান কমাতে দাম বাড়ছে। তাছাড়া পরিবহণের খরচ করেছে।”