shono
Advertisement

Durand Cup Derby 2023: বদলার ডার্বিতে অন্য ইস্টবেঙ্গল, নন্দকুমারের গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে জয়ের সরণীতে লাল-হলুদ

২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। মাঝে প্রায় সাড়ে চার বছর সময়।
Posted: 07:46 PM Aug 12, 2023Updated: 08:51 PM Aug 12, 2023

ইস্টবেঙ্গল – ১ (‘নন্দকুমার)
মোহনবাগান – ০

Advertisement

সব্যসাচী বাগচী: ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। মাঝে প্রায় সাড়ে চার বছর সময়। ক্যালেন্ডারের নিরিখে সময়টা কম নয়। ডার্বি যুদ্ধ (Kolkata Derby) হারের উপাখ্যান শুরু হয়েছিল আই লিগের (I League) মঞ্চ থেকে। সেখান থেকে লজ্জার অধ্যায় আইএসএল (ISL) ঘুরে অবশেষে ঘটল শাপমুক্তি। ডুরান্ড কাপের মঞ্চে। ৬০ মিনিটে নন্দকুমারের (Nandha Kumar) বিশ্বমানের গোলের সৌজন্যে অভিষেক ম্যাচেই মোহনবাগানকে (Mohun Bagan) হারানোর স্বাদ পেলেন কার্লোস কুয়াদ্রাত (Carlos Cuadrat)। তাও আবার আটটি ডার্বি হারের পর এল ১-০ গোলে স্বস্তির জয়।

ম্যাচের আগে জুয়ান ফেরান্দোর মোহনবাগানকে অত্যন্ত সম্মান জানিয়েই, কুয়াদ্রাত বলেছিলেন, “মোহনহবাগান যতটা সহজ ভাবছে, ততটা সহজ হবে না! আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।” কথা রাখলেন কুয়াদ্রাত। লাল-হলুদ সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে গেলেন স্প্য়ানিশ হেডস্য়র। কারণ একমাত্র ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাই জানেন যে, যে এই জয় আর পাঁচটা জয়ের মতো নয়, এদিনের জয় ঐতিহাসিক। এদিনের জয় বহু অপমান ও বহু বুক ভাঙার ক্ষতে প্রলেপ।

মেগা ডার্বির বল মাঠে গড়ানোর আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জ্যাসন কামিন্স। তিনি নামলেন ৫৫ মিনিটে। সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় ফুটবলে অভিজ্ঞ সাহাল আব্দুল সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপা, লিস্টন কোলাসোরা। তবে লাভের লাভ কিছুই হল না। আগাগোড়া পুরো ম্যাচে লিস্টনকে মার্ক করে খেলতেই দিলেন হরমনজ্যোত সিং খাবরা। অন্যদিকে সল ক্রেসপো মাথা তুলতে দিলেন না অনিরুদ্ধকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গোল করে গেলেন তরুণ নন্দ।

[আরও পড়ুন: Durand Cup Derby Live: যুবভারতীতে শাপমুক্তি, সাড়ে চার বছর পর ডার্বির রং লাল-হলুদ]

৬০ মিনিটে অবশেষে ডেডলক ভাঙে। বাঁধিয়ে রাখার মত গোল করেন নন্দকুমার। একক দক্ষতায় তিনি মিডফিল্ড থেকে বল নিয়ে যান। ডানদিক থেকে বল নিয়ে তিনি উঠে যায় মোহনবাগানের বক্সে। অনিরুদ্ধ থাপা তাঁকে মার্ক করলেও তাঁকে কাটিয়ে নন্দ বাঁ পায়ের জোরাল শটে গোল করে যান। বিশাল কাইথের কিছুই করার ছিল না।

শুধু তো নন্দর গোল নয়। ৯০ মিনিটের যুদ্ধে লাল-হলুদ একজোট হয়ে খেলতেই চাপে পড়ে যায় মোহনবাগান। ফুটবল পন্ডিতরা এই লাল-হলুদকে গুরুত্ব দেয়নি। তারকা ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা শনিবার সকালেই এসেছেন। তাঁর খেলার কোনও প্রশ্নই ছিল না। বাকি যাঁদের নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ভাল ভাবে বোঝাপড়াই গড়ে ওঠেনি। সেই দল নিয়েই বাজিমাত করে দিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। বাংলাদেশ সেনার বিরুদ্ধে যে দলটা আগের ম্যাচে দু’গোলে এগিয়ে ড্র করেছিল, তারাই ৬০ মিনিটে গোল দিয়ে ভারতের অন্যতম সেরা দলকে আটকে রাখল ম্যাচের শেষ পর্যন্ত।

গোলের পর নন্দ কুমারকে নিয়ে সেলিব্রেশনে মজে লাল-হলুদ দল। ছবি: টুইটার

স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণ ছিল মোহনবাগানের। ইস্টবেঙ্গল খেলছিল ধীরগতিতে। কিন্তু সময় যত গড়াল ততই এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে এই ইস্টবেঙ্গল আগের তিন বারের দল নয়। গত তিন বছরে যে ভাবে বার বার লাল-হলুদের রক্ষণ ভেঙে ঢুকে যেতেন মোহনবাগানের ফুটবলারেরা, এ দিন সেটা হচ্ছিল না। বরং ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স ছিল অনেক ছন্দবদ্ধ।

তখন বেশ জাঁকিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। লাল-হলুদ গ্যালারি উত্তাল। যেন জ্বলছে অদৃশ্য মশাল। চার বছর পর যুবভারতীতে ডার্বিতে গোল করল ইস্টবেঙ্গল। দীর্ঘ দিন বাদে পাওয়া মুহূর্ত খোয়াতে চাইছিলেন না ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা। উল্টো দিকে থাকা মোহনবাগান গ্যালারি তখন স্তব্ধ।

[আরও পড়ুন: Wrestler Sexual Harassment Case: আরও বিপাকে যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ, কী প্রমাণ পাওয়া গেল?]

গোল করে কিছুটা সময়ের জন্যে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে উঠেছিল মোহনবাগান। কামিন্স অন্তত দু’টি ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম বার তাঁর ডান পায়ের শট আটকে যায় ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডারের গায়ে। দ্বিতীয় বারের সুযোগটা অনেক ভাল। বাঁ দিকে ভাসানো ক্রস। কিন্তু কামিংসের বাঁ পায়ের শট উড়ে গেল বারের উপর দিয়ে।

ম্যাচ শেষের তখন মিনিট কয়েক বাকি। যুবভারতী জুড়ে নামল বৃষ্টি। তার মধ্যেই একটানা আক্রমণ করে গেল মোহনবাগান। কিন্তু সমতা ফেরানোর গোল অধরাই থেকে গেল। চলতি মরশুমে শুধুমাত্র ফুটবলারদের জন্য সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের খরচ প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। আর এই খাতে ইস্ট বেঙ্গল ব্যয় করেছে মাত্র ২৫ কোটি। দুই দলের লগ্নিকারী সংস্থার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

তবে সব হিসেব বদলে দিল লাল-হলুদ। বাইবেলের ডেভিড বনাম গোলিয়াথের গল্প হয়তো ম্যাচের আগে লাল-হলুদ ড্রেসিং-রুমে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। সবাই তো জানেন, অসম লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেছিল ডেভিডই। এবারও সেটাই দেখা গেল শনিবাসরীয় যুবভারতীর সবুজ গালিচায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement