শিলাজিৎ সরকার: একটা-দু’টো নয়। দশ বছর সময় লাগল জন আব্রাহামের। এক দশক অপেক্ষার পর জাতীয়স্তরে একটা ট্রফি জিতল তাঁর দল নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড এফসি। আইএসএলে তারা সেমিফাইনালের গণ্ডি পার হতে পারেনি এখনও। সুপার কাপেও আসেনি কাঙ্খিত সাফল্য।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম সাফল্যের স্বাদ পেলেন জন। শনিবার ডুরান্ড কাপে। ফাইনালে মোহনবাগানকে হারিয়ে, তা আবার কলকাতার মাটিতে। যে সাফল্যের সাক্ষী হতে একদিন আগেই শহরে চলে এসেছিলেন বলিউডের এই তারকা। রাতেই টিম হোটেলে গিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন। উজ্জীবিত করেছেন ফুটবলারদের। আবার এদিন যুবভারতীর বুকে ফাইনাল জিতে সেই জনকে কেন্দ্র করেই উৎসব শুরু হল আলেদিন আজারাই, গিয়ের্মো হিয়েরোদের। তিনি দূরে-দূরে থাকতে চাইলে ফুটবলাররাই টেনে নিয়ে জনকে দাঁড় করালেন দলের সঙ্গে। পেনাল্টি শুটআউটে জোড়া সেভে নর্থ-ইস্টের জয়ের নায়ক গুরমিত সিং। ম্যাচ শেষে তাঁর মুখেও জন-বন্দনা। “জন ভাইয়ের সবসময় আমাদের উৎসাহ দেন। ম্যাচের আগেও বলেছিল, জয়-হারের কথা না ভেবে খোলা মনে খেল। আমরা ওঁর পরামর্শ মতোই খেলার চেষ্টা করেছি। এটা নর্থ-ইস্টের প্রথম ট্রফি, জন ভাইয়ের প্রথম ট্রফি। তাই আমরা খুব খুশি।” আর জন? তিনি কী বলছেন দশ বছরের অপেক্ষা শেষ হওয়া প্রসঙ্গে? নর্থ-ইস্ট কর্ণধারের ছোট্ট জবাব, “ফিলিং ফ্যান্টাস্টিক!”
[আরও পড়ুন: ‘দ্বিতীয়ার্ধটাই সব শেষ করে দিল’, ‘ভুল’ মানলেন সবুজ-মেরুন কোচ মোলিনা]
অবশ্য একা জন কেন! স্বস্তিতে নর্থ-ইস্ট কোচ জুয়ান পেদ্রো বেনালিও। গত মরশুমে কলকাতা সফর যে একেবারেই সুখের স্মৃতি নয় তাঁর কাছে। আইএসএলে দুই প্রধানের বিরুদ্ধেই বড় ব্যবধানে অ্যাওয়ে ম্যাচ হেরেছেন। আর এই ডুরান্ডেই ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারতে হয়েছিল ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও। সেই টাইব্রেকারে। এবার যেন তারই পুনরাবৃত্তি হল, তবে বেনালির পক্ষে। নিজেই সেকথা উল্লেখ করে বলছিলেন, “আমরা গতবার ডুরান্ড সেমিফাইনালে এভাবেই এগিয়ে ছিলাম ২-০ ব্যবধানে। তারপর প্রতিপক্ষ সমতা ফিরিয়ে টাইব্রেকারে হারায় আমাদের। সেটাই ছিল কলকাতায় আমাদের শেষ ডুরান্ড ম্যাচ। এবার সেই ইতিহাস বদলে দিতে পারলাম। তাছাড়া এটা আমাদের প্রথম ট্রফি। তাই খুশিটা একটু বেশিই।” জয়ের নায়ক গুরমিতকে নিয়েও উচ্ছ্বসিত নর্থ-ইস্ট কোচ। বলে গেলেন, “আমরা ভরসা রেখেছিলাম গুরমিতের উপর। ও ম্যাচেও খুব ভালো খেলেছে।” ফাইনালে নর্থ-ইস্টের হয়ে সমতা ফেরানো গিয়ের্মোর মুখেও গোলকিপারের প্রশংসা। তাঁর কথায়, “গুরপ্রীতই সেরা গোলকিপার।”
অবশ্য গুরমীত যদি টাইব্রেকারের নায়ক হন, ৯০ মিনিটে নর্থ-ইস্টের সেরা প্লেয়ার নিশ্চিতভাবেই আজারাই। একটা গোল করলেন, একটা করালেন। সঙ্গে কয়েকটা বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন সতীর্থদের জন্য। আর এই ট্রফি তাঁর কাছে ভবিষ্যতের পাথেয়। আজারই বলছিলেন, “আমরা একটা দল হিসাবে জিতেছি। তাই এই ট্রফি দলের সবার জন্য আমি উৎসর্গ করছি। মরশুমের শুরুতেই সাফল্যে পেলাম। আশা করছি আরও ট্রফি জিতব।”
এই সাফল্যের আশাই তো এক দশক ধরে করেছেন জন আব্রাহাম।