মলয় কুণ্ডু: বিসর্জনের নয়া মডেলে পরিবেশ দূষণ অনেকটাই আটকানো গিয়েছে। দুর্গা পুজোর (Durga Puja 2020) পর এবার সেই মডেলই পরবর্তী লক্ষ্মী, কালী, জগদ্ধাত্রী থেকে ছটপুজোতেও প্রয়োগ করে দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় রাজ্য সরকার।
বিসর্জনে দূষণ রুখতে ‘ন্যাশানাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’র (NMCG) গাইডলাইন সামনে রেখে পরীক্ষামূলকভাবে এবার বিশেষ ব্যবস্থা করেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দক্ষিণ দমদম (Dumdum) পুর এলাকায় দু’টি বড় পুকুর লেকটাউনের (Lake Town) দেবীঘাট ও দমদম পার্কের চার নম্বর পুকুরে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুকুরের ভিতরে সিন্থেটিক লাইনার লাগানো হয়েছে। যাতে পুজোর ফুল, মালা বা অন্যান্য সামগ্রী জলের তলায় জমে থাকতে না পারে। সেগুলি দ্রুত জল থেকে তুলে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। এর ফলে গঙ্গায় (Ganges) দূষণ হচ্ছে না। অস্থায়ীভাবে তৈরি করা পুকুরে নিযুক্ত কর্মীরা দ্রুত আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। ফলে দূষণের মাত্রা একেবারেই কমে গিয়েছে।
এই ব্যবস্থা অন্যান্য পুজোগুলির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলেই মত পরিবেশকর্মীদেরও। এই দু’টি পুকুর তাই রেখে দেওয়া হচ্ছে ছটপুজো (Chhath Puja 2020) পর্যন্ত। যাতে অন্যান্য পুজোর বিসর্জনও করা যায়। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানিয়েছেন, “ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’র যে গাইডলাইন রয়েছে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: শোভাযাত্রার সময় বাঁধা, কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর নির্দেশিকা দিল প্রশাসন]
নিউটাউন (Newtown) কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটি এর আগে পরিবেশ দূষণ রুখতে এমনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। উপাসনা ঘাটটি এর জন্য প্রস্তুত করা হয়। এবারও সেখানে একইভাবে বিসর্জন হচ্ছে। দূষণ কমিয়ে ফেলার এই মডেল বেশ কার্যকরী হয়েছিল বলেই দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ একটি নির্দেশিকা দিয়েছিল বিসর্জনে দূষণ আটকাতে। গঙ্গায় যতটা সম্ভব দূষণ যাতে রোখা যায় সে দিকে লক্ষ্য রেখে স্থানীয় পুরসভা ও মিউনিসিপ্যালটিগুলি কাজ করেছে। তার জন্য সিন্থেটিক লাইনিং দেওয়া, মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা করা, ভেসে থাকা আবর্জনা দফায় দফায় পরিষ্কার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী।
দপ্তর সূত্রে খবর, দূষণ কতটা হচ্ছে এবং সেটাও কীভাবে পুরোপুরি আটকানো যায়? তা খতিয়ে দেখতে বিসর্জনের আগে, বিসর্জনের সময় ও তার পরে দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হবে। ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’র গাইডলাইন মেনে যাতে দুর্গা পুজোর বিসর্জনের মতোই পরবর্তী সময়ে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে দূষণ অনেকটা কমবে বলেই মনে করছে দপ্তর। তাই লেকটাউন ও দমদমের দু’টি পুকুরে পরের পুজোগুলির বিসর্জনের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। এবার দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজো কমিটি যেভাবে মণ্ডপের সামনেই অস্থায়ীভাবে জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করে প্রতিমা বিসর্জনের কাজ সারা হয়েছে। তাতে দূষণ আটকানো গিয়েছে। পরবর্তী পুজোগুলির বিসর্জনের ক্ষেত্রেও অস্থায়ী বিসর্জনের পুকুর আরও বেশি করা যায় কি না তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে পরিবেশ দপ্তর।