সরোজ দরবার ও সুলয়া সিংহ: কুমোরটুলিতে (Kumartuli) এবার দুয়ারে মমতা। নিঃসন্দেহেই বলা যায়, ২০২১-এর দুর্গাপুজোয় কুমোরটুলির আস্তিনে যদি তুরুপের তাস কিছু লুকোনো থাকে, তবে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। বাগুইআটির নজরুল পার্ক উন্নয়ন সমিতিতে দশভুজা হিসেবে মমতাকে উপস্থাপন করছেন শিল্পী মিন্টু পাল। সে তো এখন জানা কথাই। তবে এখানেই চমকের শেষ নয়। কুমরোটুলিতেই তৈরি হচ্ছে আরও এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তি। আর যাঁর হাতের গুণে ফুটে উঠছে মুখ্যমন্ত্রীর অবয়ব, তিনি শিল্পী সৌমেন পাল। আনন্দপুরের পশ্চিম চৌবাগা রাধাকৃষ্ণ মহিলা সমিতির মণ্ডপে দেখা যাবে মুখ্যমন্ত্রীর এই মূর্তি।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে যে এবার বাংলার পুজোর (Durga Puja 2021) মণ্ডপে দেখা যাবে, সে খবর নতুন। পুজো মানেই তো বাঙালির কাছে মেয়ের ঘরে ফেরা। আর এবারের নির্বাচনে বাংলা যে তার নিজের মেয়েকেই চায়, সে কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে বাংলার মানুষ। তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মমতা নামের মহিমা শুধু মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশাসনিক কার্যাবলীতেই আটকে থাকে না। বাংলার মানুষ জানেন, তাঁদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল মুখ্যমন্ত্রী নন, আরও বেশি কিছু। কারও কাছে তিনিই ঘরের মেয়ে। আবার কারও কাছে তিনি সর্বকালের সেরা জননেত্রী।
বাংলার রাজনীতির মানচিত্রে মমতা (Mamata Banerjee) নিজে তাঁর স্বাতন্ত্রের আসনটি পাকা করে ফেলেছেন বহুদিন হল। আর এবারের নির্বাচনে কড়া টক্করের মুখে যেভাবে তিনি জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন, তা তাঁকে দিয়েছে অন্যরকম গরিমা। বাঙালির জনমানসে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন মমতা, এ কথা অনস্বীকার্য। ঠিক এই জায়গা থেকেই এবারের পুজোর আবহ মমতাময়। পুজোর কর্মকর্তা থেকে শিল্পীরাও জানেন জনরুচির এই হাওয়া। যে মমতা মানুষের মনে মনে ঘুরছেন, সেই মানুষের মন ছুঁতেই এবার মমতাকেই পুজোয় তুলে এনেছেন শিল্পীরা। তাই করোনা আবহে বাংলার দুর্গাপুজো যে মমতাকেই চাইছে, তা যেন খোলসা করেই জানিয়ে দিচ্ছে কুমোরটুলি।
[আরও পড়ুন: চলতি সপ্তাহ থেকেই ভবানীপুরে প্রচারে মমতা, তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে বাদ নুসরত]
কুমোরটুলির চিরচেনা সরু গলি ধরে এগিয়ে গেলেই মিলবে শিল্পী সৌমেন পালের স্টুডিও। সামনের ঝাঁপ সরিয়ে উঁকি দিলে দেখা যাবে, শিল্পী তন্ময় তাঁর কাজে ব্যস্ত। একদিকে রাখা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই চিরপরিচিত ছবি। আর তার ঠিক পাশেই শিল্পীর হাতের জাদুতে সেই মুখ ফুটে উঠছে মূর্তি হয়ে। পুজো কমিটির থেকে বরাত পাওয়া কাজ বটে, তবে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মূর্তি বানানো যে রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং তা বলতে কসুর করছেন না শিল্পী। এমন সুযোগ তো বারবার মেলে না। মুখ্যমন্ত্রীর ইমেজ সরিয়ে রেখে যে মানুষটি বিপদে আপদে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, যেভাবে তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত সাধারণ মানুষ, ঠিক সেভাবেই মমতাকে উপস্থাপিত করছেন শিল্পী। পশ্চিম চৌবাগা রাধাকৃষ্ণ মহিলা সমিতির পুজোয় দেখা যাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত মানুষের উপাখ্যান। আর যেখানে মানুষ বিপদগ্রস্ত সেখানে নিশ্চিতভাবেই পৌঁছে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আদলে তৈরি মূর্তিকেও দেখা যাবে সেই একই ভূমিকায়। ঠিক সেভাবেই মমতাকে তৈরি করছেন শিল্পী। করোনা আবহে এবার প্রতিমার চাহিদা খানিকটা কম। সৌমেন পালের আক্ষেপ, “এই সময়টায় যে চাপ থাকে, এবার সেটা নেই।” তবে সেই আক্ষেপ অনেকটাই দূর হয়ে গিয়েছে মমতার এই মূর্তি নির্মাণে। আপাতত তাঁর সমস্ত মনোযোগ মমতার আদল ফুটিয়ে তোলাতেই।
একচিলতে স্টুডিও ছেড়ে আর কিছুদিনের মধ্যেই মূর্তি পৌঁছে যাবে মণ্ডপে। আর, বাংলার মানুষ মনে মনে যে মমতাকে দেখতে অভ্যস্ত, সেই মমতাকেই মণ্ডপে দেখতে এখন থেকেই দিনগোনা শুরু করে দিয়েছেন। বাংলার পুজোও যে এবার বাংলার মেয়েকে, অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চায়, সে কথা অনায়াসেই বলা যায়।