ধীমান রায়, কাটোয়া: করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতিতে ধাক্কা খেয়েছিল নিজেদের জীবিকা। গত বছর পর্যন্তও বাজার কিছুটা খারাপের দিকেই ছিল। কিন্তু এবছর দুর্গাপুজোর আগে অনেকটাই চাঙ্গা পূর্ব বর্ধমানের শোলাশিল্প (Shola)। মরা গাঙে জোয়ার এসেছে যে! দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকেই বরাত এসেছে এবার। আসন্ন শারদোৎসবে বিপুল কাজের বরাত পেয়ে হাসি ফুটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের বনকাপাশি গ্রামের শোলাশিল্পীদের। এখন দিন রাত এক করে সাজ তৈরির কাজে ব্যস্ত তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনকাপাশি গ্রামে কম-বেশি পঞ্চাশটি শোলার সাজ তৈরির কারখানা আছে। পুরুষ ও মহিলা মিলে গ্রামের প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শোলাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শোলার কাজই গ্রামের অর্থনীতিকে ধরে রেখেছে বলা চলে। পুজোর (Durga Puja 2023) মরশুমে বনকাপাশির শোলাশিল্পীরা প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকার ব্যবসা করেন। তবে বিগত কয়েক বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মার খেয়েছিলেন বনকাপাশির শোলাশিল্পীরা। গতবছর লকডাউন না থাকলেও বাজার কিছুটা মন্দা গিয়েছে। কিন্তু এবছর ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে শোলাশিল্পীদের গ্রাম। গ্রাম জুড়ে এখন কাজের চরম ব্যস্ততা।
[আরও পড়ুন: টেট পাশ না করেই প্রাথমিকে চাকরি! OMR শিট বিকৃতি মামলায় পর্ষদের রিপোর্টে বিস্মিত হাই কোর্ট]
বনকাপাশির শোলাশিল্পীরা জানিয়েছেন, শোলার সাজের কাজ তাঁরা মূলত দুই ধরনের তৈরি করে থাকেন। একটি কাজ পুরোপুরি শোলা দিয়েই তৈরি। শোলার স্বাভাবিক রঙ হল সাদা। তাই শুধুমাত্র শোলা দিয়ে তৈরি সাজ পুরোটাই সাদা রঙের হয়। আর এক ধরনের কাজ রয়েছে যেখানে শোলার কাজের সঙ্গে থাকে জরি, পুঁতি, রঙবেরঙের চুমকি ইত্যাদির মিশেল। এই ধরনের কাজ বিভিন্ন রঙবেরঙে সজ্জিত থাকে। শিল্পী প্রসাদ ঘোষ, পার্থ পালরা বলছেন, “আমরা এবছর কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন শহর এবং ভিনরাজ্য থেকেও বরাত পেয়েছি। যতগুলি বরাত এসেছে প্রায় সবই বিগ বাজেটের পুজো। প্রতিমা সজ্বার পাশাপাশি মণ্ডপসজ্জার জন্যও শোলার কাজের বরাত এসেছে।”
[আরও পড়ুন: মহিলা সংরক্ষণ বিলে বিজেপির বক্তা তালিকায় ব্রাত্য বাংলার সাংসদরা, ক্ষোভ বঙ্গ ব্রিগেডে]
শোলাশিল্পী ভুবন বারুই বলেন, “কোনও কমিটির আড়াই লক্ষ, কারও তিন লক্ষ টাকার কাজের বরাত এসেছে। বড় অঙ্কের বরাত বেশিরভাগই এসেছে ভিনরাজ্য থেকে। কয়েকবছর ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা মার খেয়েছিলাম। আবার সেই পুরনো বাজার ফিরে পেয়েছি।” তবে এরই মধ্যে শোলার আমদানি কিছুটা কম বলে জানান শোলাশিল্পীরা। সেজন্য কাঁচামালের দাম কিছুটা বেশি। জানা গিয়েছে, বনকাপাশির শোলাশিল্পীদের শোলা বেশিরভাগ আসে নদিয়া (Nadia) জেলা থেকে। তাছাড়া ডায়মন্ড হারবার, শিকারপুর থেকেও শোলা আসে। এবছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণেই শোলার আমদানি কম বলে জানা গিয়েছে।
দেখুন ভিডিও: