সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: এক চিলতে ঘর। টালির চাল। জায়গায় জায়গায় ত্রিপল দেওয়া। তাও জল পড়ে ঘরে। দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে চাঙড়। নোনা ধরা বারান্দা। সেখানে বসে এক মনে পটচিত্রে দুর্গার ও বিভিন্ন ছবি এঁকে চলেছেন ৭৭ বছর বয়সি শিল্পী। সেই চিত্রকলা যাবে রাজ্যের বিভিন্ন মণ্ডপে। ইতিমধ্যেই কিছু বিক্রি হয়েছে। এই দিয়েই নিজের খরচ চালাছেন তিনি।
কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির বাসিন্দ বেরা পাল। প্রায় ৫৫ বছর আগে এই বাড়িতে আসেন তিনি। সেই ভরা যৌবনে স্বামীর হাত ধরে শেখেন পটচিত্র আঁকা। সারা জীবন সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ভেঙে সঙ্গ ছেড়েছেন স্বামী। সেটাও হয়ে গিয়েছে ২০-২২ বছর। ছেলে-বৌমার সংসার আলাদা হয়েছে। স্বামীর স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে থেকেছেন একাই। তবে পেট তো চালাতে হবে। স্বামীর থেকে শেখা সেই ছবি আঁকাই রেবাদেবীর হাতের লাঠি হয়ে উঠেছে।
বারান্দায় বসেই এক মনে পটচিত্র আঁকেন। যা বড় বড় দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। শুধু কৃষ্ণনগর নয়, তাঁর পটচিত্র কলকাতা এবং দেশের অন্যান্য স্থানেও পৌঁছে যায়। কিন্তু এ বয়সেও এত ধকল নেওয়া কেন? রাজ্য সরকার থেকে মাসে এক হাজার টাকা ভাতা পান তিনি। তবে দিন চলার জন্য তা অপ্রতুল। এই পটচিত্র বিক্রি করে যা টাকা সেই দিয়েই কোনও মতে খরচ চালাচ্ছেন শিল্পী।
স্মৃতির চিলেকোঠায় উঁকি মেরে রেবাদেবী বলেন, " বিয়ের হয়ে আসার পর থেকে স্বামীর হাত ধরে এই কাজ শেখা। ওকে সহযোগিতা করতে করতেই কাজ শিখেছি। আমাকে সব সময় কাজে উৎসাহ দিত আমার স্বামী। আমার এই চিত্র বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছে। এবারও যাবে। আগে বিধাননগর, কুমোরটুলি গিয়ে দিয়ে এসেছি। এখন আর পারি না।" দিনের আলো পড়ে এসেছে। সূর্য যাব যাব করছে। আলো জ্বালাতে উঠতে হবে। এখনও কত কাজ বাকি...।