সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাঝখানে দেবী দূর্গা। দুপাশে রয়েছে তার চার ছেলেমেয়ে। লক্ষ্মী-গণেশ-সরস্বতী-কার্তিক। এই চিরচেনা ছবিটার বয়স কিন্তু চার-পাঁচশো বছরের বেশি পুরনো নয়। আরও প্রাচীনযুগের মূর্তিতে দেখা যায় সিংহবাহিনী দেবী বধ করছেন মহিষাসুরকে। তাঁর সঙ্গে ছেলেমেয়েরা কেউ নেই। সুতরাং ধরে নেওয়া যায়, একচালা প্রতিমার বয়স কয়েকশো বছরের বেশি নয়।
এভাবেই নানা পরিবর্তনের মধ্যে বদলেছে প্রতিমার মূর্তি। যেমন, অনেক সময় দেখা যায়, শরীর সিংহের মতো হলেও দুর্গার বাহনের মুখ ঘোড়ার মতো। কলকাতার মিত্রবাড়িতে সেই প্রাচীন ধারা এখনও অনুসৃত হয়। কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতেও সিংহের মুখ অশ্বসদৃশ। কিন্তু কেন? কেন সিংহবাহিনীর বাহনের মুখে অশ্বের ছাপ?
মহেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর 'কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা' গ্রন্থে জানাচ্ছেন, এটা আসলে বৈষ্ণববাড়ির প্রতিমার বৈশিষ্ট্য। যদিও কালীঘাটের পটে আঁকা কিংবা উনিশ শতকের কাঠখোদাই ছবিতেও এমন ঘোড়ামুখী সিংহের দেখা মেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানে রয়েছে একটা অন্য কারণ। ১৮৬৬ সালে আলিপুরে চিড়িয়াখানা স্থাপিত হয়। দল বেঁধে সেখানে গিয়ে বাঙালি প্রত্যক্ষ করে সিংহকে। তার আগে পর্যন্ত সুজলা সুফলা বঙ্গদেশে হলদে-কালো ডোরাকাটা বাঘই ছিল সর্বেসর্বা। সিংহকে চাক্ষুষ করার সুযোগ হয়নি। আর সেই কারণেই এর আগে শিল্পীরা তাঁর কল্পনায় পশুর মাথায় কেশর বসিয়ে দিতেন বটে, কিন্তু সিংহের মুখের অবয়ব তাঁদের অধরাই ছিল। কালক্রমে এটা হয়ে ওঠে একটা বিশেষ স্টাইল। যে ধাঁচের সিংহ আজও কোথাও কোথাও রয়ে গিয়েছে দেবী দুর্গার পাশে।
আজকের থিমসর্বস্ব পুজোয় অবশ্য নানা এক্সপেরিমেন্টই দেখা যায়। মোটামুটি ভাবে গত শতকের ছয়ের দশক থেকেই তা লক্ষ করা গিয়েছিল। কিন্তু নতুন সহস্রাব্দে এসে তা নতুন মাত্রা পায়। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে ফিরে ফিরে এসেছে একচালা প্রতিমাও। এভাবেই পুরনো সময় ফিরে এসে নতুনের বুকে জায়গা করে নেয়।