সুলয়া সিংহ: ‘এবার দেবদারুর ফটক বন্ধ’। হ্যাঁ, বেহালা ১৪ নম্বর বাস স্ট্যান্ডের উলটো পারে গেলে এবার বিরাট করে এই ব্যানারই চোখে পড়বে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তিলোত্তমার দ্বিতীয় পুজো প্যান্ডেল হিসেবে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল বেহালা দেবদারু ফটক পুজো কমিটি। এবার তাদের পুজোয় দর্শনার্থীদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বুধবারই শহরের ঐতিহ্যবাহী পুজো (Durga Puja) কমিটি সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার (লেবুতলা পার্ক) জানিয়েছিল, অনেক চিন্তাভাবনা, আলাপ-আলোচনার পর দর্শকহীন পুজোই করবে তারা। অর্থাৎ ক্লাব সদস্য ছাড়া আর কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। এবার একই পথে হাঁটল দেবদারু ফটক। নিজেদের ৪৮ তম বর্ষে এসে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিল তারা। পুজো উদ্যোক্তাদের কথায়, উৎসবের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। সকলে সুস্থ থাকলে আসছে বছর তো সবাই মিলে উৎসবে মেতে উঠতে পারবই। এবছরটা না হয় মানুষ ভারচুয়ালিই পুজো দেখলেন। দুর্গা মায়ের দর্শনও হবে আবার বাড়িতেও থাকা হবে।
[আরও পড়ুন: মণ্ডপে ভিড়ের ঝুঁকি নেই, এবার ঘরে বসেই অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে পারবেন এখানকার বাসিন্দারা]
পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে রাজ্যজুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে অব্যাহত মৃত্যুমিছিলও। পরিস্থিতি ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতর হয়ে উঠছে। এমন সংকটের দিনে মণ্ডপ চত্বরে দর্শক প্রবেশ নিষেধের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক। ক্লাবের সভাপতি শক্তিপদ মণ্ডল বলছিলেন, বেহালা ক্লাব, আদর্শ পল্লি আর দেবদারু ফটক- এই তিন ক্লাবের হাত ধরেই বেহালায় থিম পুজোর খাতে খড়ি। সেই ‘৯৮ সাল থেকে দেবদারু ফটকে থিম পুজো আয়োজিত হচ্ছে। এবারও যতটা সম্ভব কম পরিসরে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশিকা মেনে রাস্তার অনেকটা কাছে এগিয়ে আনা হয়েছে মণ্ডপ। যাতে প্যান্ডেলে না ঢুকেও মায়ের দর্শন করে সোজা রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন মানুষ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ক্লাবকে এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর এই পরিস্থিতিতে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে।
কিন্তু মণ্ডপে তো শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে? তাহলে কি পুজোপ্রেমীরা এবার দেবদারু ফটকের পুজো দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন? একেবারেই নয়। মেন রোডের উপর একটি জায়ান্ট স্ক্রিনে প্যান্ডেল দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুজো যাতে বাড়ি বসেই লাইভ দেখা যায়, সেই চেষ্টাও করছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া পুজো দেখাতে একাধিক অ্যাপের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছে দেবদারু ফটক। আর ক্লাবের ফেসবুক পেজ থেকেও দেখে নেওয়া যাবে মণ্ডপ সজ্জা। এবার তাদের থিম ‘শব্দযাপন’। একদিকে শহরের ক্যাকোফনি আর অন্যদিকে আচমকা লকডাউনে (Lockdown) ফিরে পাওয়া প্রকৃতি ও পাখিদের কলরব- এই দুই শব্দের সহাবস্থান ঘটিয়েছেন শিল্পী শুভদীপ ও সুমি মজুমদার। একচালায় মায়ের মমতাময়ী রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিমাশিল্পী সৌমেন পাল। এসবই দেখতে পাবেন বাঙালি। তবে ভারচুয়ালি। “অতিমারীতে প্যান্ডেল হপিং থেকে বিরত থেকে নাহয় প্রযুক্তিতেই ভরসা রাখুন। যাতে পরেরবার সকলে মিলে একসঙ্গে উৎসবে শামিল হওয়া যায়।” অনুরোধ দেবদারু ফটকের সদস্যদের।