সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: গ্রামে এবারই প্রথম হবে উমা আরাধনা। দেবী দুর্গা পূজিতা হবেন নারীশক্তি বাহিনীর হাত ধরেই। সৌজন্যে ‘দিদি’র দেওয়া লক্ষীর ভাণ্ডারে তাঁদের জমানো টাকা। খুশির হাওয়ায় ভাসছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির একতারা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোটা মলয়া গ্রাম।
মলয়া গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান জীবিকা চাষবাস। অর্থনৈতিকভাবে বেশ দুর্বলই বলা চলে তাঁদের। সংসারে কেবল একটু সুখের আশায় বছরভর উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলান তাঁর। কিন্তু অভাব আজও নিত্যসঙ্গী মানুষগুলোর। শারদীয়ার মহোৎসব বড় একটা দাগ কাটে না ওঁদের মনে। শরতের আগমনী বার্তায় সারা বাংলা যখন আনন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকে মলয়ার গ্রামবাসীরা তখন পর্যাপ্ত ফসল ফলাতে না পারার বেদনায় উদ্বিগ্ন। শখ-আহ্লাদ পূরণ তো দূরে থাক, সারাটা বছর অন্নের সংস্থান কীভাবে হবে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার অর্থ জোগাড় – এসব দুশ্চিন্তায় দিন কাটান তাঁরা।
[আরও পড়ুন: মহিলার স্নানের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে ব্ল্যাকমেল! অপমানে আত্মঘাতী বধূ]
পুজোর চারদিন কেউ কেউ গ্রামের বাইরে ঠাকুর দেখতে যেতেন। কিংবা অষ্টমীর অঞ্জলী দিতে বেরোলেও অধিকাংশই ব্যস্ত থাকতেন তাদের রুজিরোজগারে। আলো আর খুশির রোশনাই গায়ে মেখে সারা বাংলা যখন আনন্দে আত্মহারা, ওই গ্রামের মানুষ তখন দিশেহারা তাঁদের জীবনসংগ্রামে। শিশু ও বয়স্করা থাকতেন গৃহবন্দি। গ্রামবাসীদের বহুদিনের ইচ্ছা গ্রামে দুর্গাপুজোর আয়োজনের। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিপুল খরচ। সমস্যা সমাধানে এবার এগিয়ে এল গ্রামের নারীশক্তি বাহিনী। বেশ কয়েকমাস ধরেই বাহিনীর সদস্যদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বিষয়টা। গ্রামে পুজোর আয়োজনে শুরু হয় নানা পরিকল্পনা। শেষমেষ ঠিক হয় এবারই প্রথম মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে দুর্গাপুজো হবে গ্রামেই। মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো টাকা দিয়ে হবে অর্থ সংস্থান।
প্রায় বছরখানেক ধরে টাকা খরচ না করে তা জমাতে শুরু করি গৃহবধূরা। সেই জমানো টাকা আর গ্রামের বাড়ি বাড়ি থেকে তোলা চাঁদায় পুজো করছি। কেবল মহিলারাই নয়, পুরুষরাও সাহায্য করছেন আমাদের। সকলে মিলে চলছে পুজোর আয়োজন। প্রতি বছরই পুজো হবে গ্রামে। গ্রামবাসীদের আর গ্রামের বাইরে গিয়ে পুজো দেখতে হবে না।” দশভূজার আগমন বার্তায় খুশিতে তাই এখন ভাসছে গোটা গ্রাম। ভরপুর আনন্দে মেতে উঠেছে গ্রামের আট থেকে আশি।