বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: পুজোর (Durga Puja) ছুটিতে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ যান উত্তুরে হাওয়া খেতে। উত্তরবঙ্গের মানুষকে আবার টানে সাগর, মরুভূমি ও ভূস্বর্গ। এক অদ্ভুত বৈপরীত্য। চা বাগান, পাহাড়, জঙ্গলের পরিবেশে বসবাসের ক্লান্তি জুড়োতেই যেন উলটপুরাণ। পরিস্থিতি এমনই যে পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস, দার্জিলিং মেল, পুরী এক্সপ্রেস-সহ কোনও ট্রেনে টিকিট নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে একটি স্পেশাল ট্রেন। যদিও ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যটকদের চাহিদা এবার যে পর্যায়ে পৌঁছেছে একটি স্পেশাল ট্রেনে খুব একটা লাভ হবে না। রেল কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, চাহিদা বুঝে প্রয়োজনে স্পেশাল ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নীলাঞ্জন দেব বলেন, ‘‘পুজোর মরশুমে প্রতিটি ট্রেন আপ-ডাউন ফুল বুকিং আছে। প্রতিদিন প্রচুর ফোন আসছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে একটি স্পেশাল ট্রেন দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে।’’ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে পুরী এক্সপ্রেস ও পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস ট্রেনের। একই ছবি দার্জিলিং মেলের। অনেকেই পুরী অথবা পাহাড়ি এক্সপ্রেসে টিকিট না পেয়ে দার্জিলিং মেলের টিকিট করে ব্রেক জার্নির পথ নিয়েছেন। পুজোর ছুটিতে(Durga Puja Travel) তাদের হোটেল বুকিং রয়েছে দিঘা অথবা পুরীতে।
এমনই এক পর্যটক শিলিগুড়ি ভারত নগরের বাসিন্দা প্রলয় চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘পুরী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য এক মাস ধরে অনেক চেষ্টা করেছি। পাইনি। অবশেষে দার্জিলিং মেলে টিকিট করেছি। কলকাতা থেকে সপরিবারে পুরীতে যাচ্ছি।’’ ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারও উত্তরের পর্যটকদের পছন্দের প্রধান ভ্রমণকেন্দ্র হয়েছে সাগর। দিঘা, পুরী তো আছেই। গোয়া, চেন্নাই, পুদুচেরির চাহিদাও বেড়েছে। অনেকেই প্যাকেজ ট্যুরে যাচ্ছেন জম্বু-কাশ্মীর, রাজস্থান অথবা কেরল। আগ্রা, আজমের শরিফ ভ্রমণের উৎসাহ ক্রমশ বাড়ছে।
[আরও পড়ুন: Durga Puja Lifestyle: এবার পুজোয় সেজে উঠুক আপনার ঘরও, রইল স্বল্প বাজেটে অন্দরসজ্জার টিপস]
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু জানান, উত্তরের বেশিরভাগ পর্যটক পুজোর ছুটির কয়েকটি দিন সমুদ্র সৈকতে কাটাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিছু পর্যটক মরুভূমিতে সময় কাটাতে চাইছেন। তিনি বলেন, ‘‘সেভাবেই এখানকার পর্যটকরা ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হোটেল বুক করেছেন এবং এখনও করছেন।’’ কিন্তু হাতের কাছে চোখ জুড়ানো দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিম, জঙ্গল থাকতে কেন টিকিটের জন্য লাইন দিয়ে হাপিত্যেশ করে সাগরে, মরুভূমিতে ছোটার তাগাদা? যখন দক্ষিণের পর্যটকরা উত্তরের মাধুর্য উপভোগের জন্য উত্তরে ভিড় জমাতে উতলা তখন কেন স্থানীয়দের উলটো প্রবণতা?
পর্যটক তথা ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা পাহাড়, জঙ্গল, চা বাগান ঘেরা পরিবেশে বেড়ে উঠেছি। তাই যা কিছু এখানে নেই সেটাই দেখতে ইচ্ছে হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বৈচিত্র্য উপভোগের ইচ্ছে তো থাকেই।’’ কিন্তু উত্তরের কত পর্যটক প্রতি বছর সাগর, মরুভূমি অথবা ভূস্বর্গে বেড়াতে যান সেই পরিসংখ্যান ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলো দিতে পারেনি। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের কর্ণধার সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এখন অনলাইনে বুকিংয়ের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্যাকেজ ট্যুরের বুকিং চলে। তাই উত্তরের কত পর্যটক পুজোর ছুটিতে বাইরে যান সেই সংখ্যা বলা সম্ভব নয়।’’
যদিও পর্যটন সংস্থাগুলো জানিয়েছেন, উত্তরের বেশিরভাগ পর্যটক ভিড় জমান পুরীর সমুদ্র সৈকতে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে গড়ে ১৬০০ যাত্রী যেতে পারে। সম পরিমাণ যাত্রী পরিবহণ করে পুরী এক্সপ্রেস ট্রেন। মহালয়ার দু’দিন আগে থেকে এবারও ট্রেন দুটোতে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার বিভাগের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম বলেন, ‘‘প্রতিটি ট্রেন ফুল বুকিং আছে। মহালয়ার আগে থেকেই পর্যটকদের গন্তব্যে পৌঁছানো শুরু হয়ে যাবে।’’