শতরূপা বসুরায়, আমস্টারডাম: মার্ক রুটে। উচ্চতায় প্রায় সাত ফুট। ছিপ ছিপে চেহারা। এই মার্ক রুটে ভদ্রলোক নেদারল্যান্ডস নামক সমুদ্রতলের নিচে অবস্থিত দেশটির প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎই ফোন নিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন মার্ক রুটে। তার থেকেও বেশি ঝামেলায় পড়েছেন তাঁর দেশের লোক এবং প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। তিনি কী ফোন ব্যবহার করেন, তা নিয়ে ডাচ মিডিয়া তোলপাড়। কারণ তাঁর ফোনে কোনও মেসেজই রাখা থাকে না। মুছে যায়। এ কি কোনও প্রযুক্তির গোলযোগ?
আরেকধাপ এগিয়ে জানা গিয়েছে, রুটে নিজেই ফোন থেকে সব মেসেজ ডিলিট করে দেন। এমনকী কোভিড অতিমারী সংক্রান্ত যে সমস্ত এসএমএস পাঠানো হয়েছিল তার সবগুলোই উনি ডিলিট করে দিয়েছেন। খেয়াল রাখবেন এসএমএস, স্মার্টফোনের হোয়াটসঅ্যাপ টেক্সট নয়। আর তাতেই ডাচ ক্যাবিনেটে হইচই শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞান নিয়েও। এমন কাণ্ড কী করে সম্ভব। মার্ক রুটে এই অভিযোগ শুনে জানিয়েছেন, ওঁর মান্ধাতার আমলের প্রাচীন ফোনটিতে জায়গা ছিল না বলে নতুন কোনও মেসেজ আসতে পারছিল না তাই উনি সব পুরনো মেসেজ ডিলিট করে দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: লস্কর ও জইশকে মদত দিচ্ছে তালিবান, রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে সত্যি হল ভারতের আশঙ্কা]
ভাবছেন, ওঁর দেশ গরীব? তাই প্রধানমন্ত্রী একটা আধুনিক প্রযুক্তির দামি ফোন কিনতে পারেননি? না, নেদারল্যান্ডসের নাম গরীব দেশের তালিকায় নেই। বরং উল্টোটাই। ২০২২ সালে দেশটির জিডিপি পার ক্যাপিটা ৬০.৬৮৯ মার্কিন ডলার। তবুও দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা স্মার্ট ফোন নেই! এটাই সত্যি। কারণ উনি অতি সাধারণ জীবন যাপন করেন। মেসেজ বিতর্কের পর ক্যাবিনেটে আলোচনার পরে ঠিক হয় যে প্রশাসনের তরফেই রুটেকে এবার একটা স্মার্ট ফোন কিনে দেওয়া হবে, যেটা উনি অফিসের কাজে ব্যবহার করবেন।
উল্লেখ্য, রুটেই কিন্তু সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি সাইকেলে চেপে সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে যান। এক কোটি ৭৪ লক্ষ মানুষ বসবাসের এই দেশে বর্ণ বিভাজন নেই, শ্রেণি বৈষম্য নেই, জাতপাত নেই, এমনকী ধর্মও নেই। বেশির ভাগ মানুষ এ দেশে নিজেকে নাস্তিক বলে থাকেন। একটাই ধর্ম মেনে চলেন, মানব ধর্ম। তাই এই দেশের প্রধানমন্ত্রী মোবাইলে এসএমএস মুছে দিলে সেটা একটা বড় খবর হয়, মানুষ তা নিয়ে আলোচনা করে। আর রুটে কী বলেন? “যে সমস্ত এসএমএস ফরওয়ার্ড করা দরকার ছিল, সেগুলো করে দিয়েছি। ফোনে আর জায়গা ছিল না।” বিরোধীদের তরফে তথ্য গোপন করার অপবাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। জবাবে রুটে হেসে বলেছেন, “সমস্ত কথোপকথন জাতীয় সংরক্ষণাগারে পাঠিয়ে দিয়েছি।”