সুলয়া সিংহ: গা ছমছমে পরিবেশ, ভয় ধরানো মিউজিক, শিহরণ জাগানো অলৌকিক ঘটনা। ভূতুড়ে ছবি দেখতে বসে এমন কিছু কনসেপ্টই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। তবে সেই একই বিষয়বস্তু পরিবেশনের ক্ষেত্রে নতুনত্বের ছোঁয়া যদি আনা যেতে পারে, দিনের শেষে সেই ছবিই বাজিমাত করে। কিন্তু ২০২১-এও যদি ভূতের সিনেমায় সেই মান্ধাতার আমলের কাহিনিই দেখানো হয়, তবে কেন তা দেখবেন বলুন তো? জয় কে’র ডিবুক (Dybbuk Movie Review) দেখে তাই ভয় তো দূর অস্ত, ভীষণ বিরক্তি হয়।
ছবির জগতে ভূত ব্যাপারটা সবসময় দারুণ ‘খায়’। এককথায় বলা যায়, পর্দায় ভূতের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। সে কথা মাথায় রেখেই ইমরান হাশমি এবং নীকিতা দত্তকে নিয়ে অলৌকিক জগতে পা রেখেছিলেন জয় কে। দেশি অশরীরীর কনসেপ্ট ভেঙে ‘ডিবুক’ ছবি ঝুঁকেছে ইহুদি পুরাণের দিকে। লোকেশন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মরিশাসকে। চিত্রনাট্যে নতুনত্ব বলতে এতটুকুই। বাকিটা বড়ই বস্তাপচা। ‘রাত’, ‘রাজ’, ‘১৯২০’-র মতো হরর ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছে বলিউড। ছবি শেষ হলেও গা ছমছমে একটা ব্যাপার থেকে গিয়েছিল। কিন্তু ডিবুকের গল্প যতই গড়ায়, ততই ছবিটি শেষ পর্যন্ত দেখার ইচ্ছে মরতে থাকবে আপনার।
[আরও পড়ুন: যেন অবিকল রানু মণ্ডল! গায়িকার বায়োপিকের লুক টেস্টে চমকে দিলেন অভিনেত্রী]
এখানে একটু বলে নিই ছবির নামকরণের বিষয়টি। পৌরাণিক মতে, ইহুদিরা আত্মাকে বশে এনে একটি বাক্সে বন্দি করে রাখত। সেই বাক্সটিকেই বলা হয় ‘ডিবুক বক্স।’ আর একবার সেই বক্স কেউ খুললে আত্মাটিও ইহজগতে ফিরে আসে সর্বশক্তি নিয়ে। যা মারাত্মক ক্ষতি করে। ছবিতে ‘ডিবুক বক্স’টি খোলে নীকিতা ওরফে মাহি। আর তার শরীরেই প্রবেশ করে সেই অতৃপ্ত আত্মা। স্ত্রীকে বাঁচাতে গির্জার ফাদার এবং ভূত তাড়ানোর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে হাত মেলায় ইমরান ওরফে স্যাম ইসাক। তখনই নানা ভূতুড়ে কাণ্ডের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। কিন্তু দর্শককে ভয় দেখানোর চেয়ে এখানে মাহির অসুস্থতাই বেশি প্রাধান্য পেয়ে গিয়েছে। শেষের টুইস্টটি আরও তালগোল পাকিয়ে দেয়। এতক্ষণ যা দেখছিলেন, তার কোনও হিসাবই মেলাতে পারবেন না। অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সিনেমা শেষ করেছেন পরিচালক।
ছবিতে ইহুদি ছোঁয়া দিলেই যে ভয়ের উদ্রেক ঘটবে, কেন যে পরিচালক এমনটা ভাবলেন, তা বোঝা দায়। অকারণে অতিরিক্ত মিউজিক রীতিমতো বিরক্তিকর। আজকের দিনে এভাবে ভয় দেখালে পরিচালকের ভাগ্যে নিন্দা ছাড়া আর কিছু জুটবে বলে তো মনে হয় না। ইমরান হাশমি কেন এমন একটি ছবিতে অভিনয়ে রাজি হলেন, সেটা ভেবেই খারাপ লাগছে। মানব কলকে ঠিক মতো কাজেই লাগানো হল না। সবমিলিয়ে ভূত চতুর্দশীর আগে ভূতপ্রেমীদের চূড়ান্ত হতাশ করল এই ছবি। নেহাত রিভিউ লেখার খাতিরে ছবিটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গলাধঃকরণ করতে হয়েছে। দয়া করে আপনি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। আমাজন প্রাইম ভিডিওতে এর চেয়ে ঢের ভাল ছবি ও সিরিজ রয়েছে।