দুলাল দে: এই মুহূর্তে আইএসএলের (ISL) লিগ টেবিলের যা অবস্থা, তাতে অঙ্কের দিক থেকে হয়তো নবম স্থানে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। কিন্তু লিগ টেবিলের পুরো চিত্রটা বদলে দিতে লাল-হলুদ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের (Carles Cuadrat) প্রয়োজন শুধু একটি জয়। আর সেই জয়টা আনতেই হবে সোমবার যুবভারতীতে নর্থ-ইস্টের বিরুদ্ধে। এই একটা ম্যাচ জিতলে মুহূর্তের মধ্যে লিগ টেবিলের নবম স্থান থেকে সপ্তম স্থানে চলে আসবে ইস্টবেঙ্গল। তারপর তো প্রথম ছয়ে ঢোকা শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তারজন্য সবার আগে দরকার সোমবার নর্থ-ইস্টকে হারানো।
ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ভালো দিক হচ্ছে, অন্যান্যদের অনেক দলের তুলনায় ম্যাচ কম খেলা। একমাত্র মোহনবাগান একটি ম্যাচ কম খেলেছে লাল-হলুদের থেকে। নর্থ-ইস্টের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে এগুলি যদি ইস্টবেঙ্গলের জন্য পজিটিভ পয়েন্ট হয়, তা হলে খারাপ পরিসংখ্যানও রয়েছে। মোহনবাগান যেখানে আইএসএলে পরপর পাঁচটা ম্যাচ জিতে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছে, ইস্টবেঙ্গল সেখানে পরপর তিনটে ম্যাচ হেরে প্রথম ছয়ে ঢোকার দৌড়ে কিছুটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর সেই কারণেই নর্থ-ইস্টকে হারিয়ে দৌড়ের চিত্রটা ফের বদলে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। ভালো দিক হচ্ছে, দলের সবাই সুস্থ। এমনকি কোনও কার্ড সমস্যাও নেই। কুয়াদ্রাতের কাছে যেহেতু একটি আইএসএল ট্রফি জেতার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই এই পরিস্থিতি থেকে একটি ভেঙে পড়া দলের অভিমুখ কীভাবে জয়ের দিকে ঘোরাতে হবে, তা বিলক্ষণ জানেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। কারণ, এবারের আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল শেষ ম্যাচ জিতেছে দু’মাস আগে, হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে।
[আরও পড়ুন: অর্শদীপের বলে ভারত জিততেই শাহিন আফ্রিদিকে ট্রোল করল পাঞ্জাব কিংস! কিন্তু কেন?]
উল্টোদিকে, এই মরশুমে প্রায় নতুন স্কোয়াড নিয়ে খেলছে, কিছুদিন আগেও আর্থিক কারণে ধুকতে থাকা নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড। ফলে পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তারাও যে খুব দারুণ জায়গায় আছে, এরকমটা নয়। তাদের নেস্টর যেমন দারুণ ফর্মে রয়েছেন। একই কথা বলা যায় ইস্টবেঙ্গলের নাওরেম মহেশ সিংয়ের জন্যও। যিনি ইতিমধ্যে লাল-হলুদ জার্সিতে দু’টো গোল করে বসে আছেন। নন্দকুমারের সঙ্গে মাঠের মধ্যে তাঁর বোঝাপড়াও শেষ ছ’টা ম্যাচে ভালোভাবেই পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু তথ্য বলছে, আইএসএলের ইতিহাসে নর্থ-ইস্টের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের ফলাফল কোনও সময়ই ভালো না। এখনও পর্যন্ত ছ’বার মুখোমখিতে নর্থ-ইস্টের যেখানে জয়ের অনুপাত তিনবার, ইস্টবেঙ্গল সেখানে জিতেছে মাত্র একবার। বাকি দু’বার ড্র। তবুও নর্থ-ইস্ট কোচ জুয়ান পেদ্রো সোমবারের ম্যাচের আগে নিজেদের ফেভারিট ভাবতে রাজি নন। বলছিলেন, “আমাদের ২৬ জন ফুটবলার আছে। প্রত্যেকেই খেলার জন্য তৈরি। একমাত্র মহম্মদ আলি বেমাম্মের খেলতে পারবে না।” পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল কোচ তাকিয়ে আছেন তাঁর দলের পরপর হোম ম্যাচের দিকে। বলছিলেন, “আমরা কোন পরিস্থিতিতে আছি, সবচেয়ে ভালো আমরাই জানি। অনেকের থেকে কম ম্যাচ খেলায় পরপর দু’টো ম্যাচ যদি জিততে পারি, পুরো পরিস্থিতিটাই বদলে যাবে। কিন্তু তার জন্য ম্যাচটা জিততে হবে। আমার ফুটবলাররা তৈরি।”
কিছুটা প্রসঙ্গের বাইরে গিয়েই এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্টবেঙ্গল কোচের সামনে আলোচনা ওঠে কলকাতা লিগের ডার্বিতে মোহনবাগানের না খেলা নিয়ে। খুবই বিস্ময় প্রকাশ করেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। বলেন, “আমি কোনও দলের নাম করতে চাই না। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, ওরা ডার্বি না খেলায় আমি খুব অবাক। জানি না ঠিক কী কারণে ওরা ম্যাচটা খেলল না। তবে জুনিয়র ফুটবলারদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদে জুনিয়ররা এরকম একটা ম্যাচ খেলার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করে থাকে। ভাবুন তো এই একটা ম্যাচটা হলে কতজন জুনিয়র ফুটবলারকে দেখার সুযোগ থাকত। আর ফুটবলাররাও নিশ্চয়ই এই একটা ম্যাচ খেলার দিকেই তাকিয়ে ছিল।”
আজ আইএসএলে- ইস্টবেঙ্গল বনাম নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড
যুবভারতী, রাত ৮.০০, স্পোর্টস ১৮