অর্ণব আইচ: পুরসভা বা এসএসসি, কিংবা টেট। প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ‘কমিশন’ নিতেন অয়ন শীল। শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গুরু’ অয়নের এই ‘একলাখি কমিশন’-এর তথ্য হাতে আসার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেই সূত্র ধরেই অয়নের ৮০ কোটি টাকা নগদের হিসাব সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। এদিকে, অয়নের সল্টলেকের অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া একটি হার্ড ডিস্ক থেকেই ১২ কোটি টাকার হদিশ মিলেছে। সেই সূত্র ধরে এগোচ্ছে তদন্ত।
অয়নের সূত্র ধরে কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে পেশ করা চার্জশিটেও একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। চার্জশিটে ইডি দাবি করেছে যে, কুন্তলের বাড়ি থেকে ২০২২ সালের টেট পরীক্ষারও ৫৩৬টি গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। ফলে ওই নথির ভিত্তিতেও টাকা তোলা হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, টেট বা এসএসসি দুর্নীতি ছাড়াও অয়নের আদলে কুন্তল ঘোষও যে পুরসভা ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের চাকরির নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন, সেই ইঙ্গিত মিলেছে ইডির চার্জশিটে। এই ব্যাপারে ইডি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগের প্রসঙ্গ তুলেছে। কুন্তলের বাড়ি থেকে বহু এজেন্টের তালিকাও ইডি পেয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলা: ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে জালিয়াতি কুন্তলদের! রহস্যভেদে গুগলের দ্বারস্থ CBI]
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএসসি বা টেট প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৬০টি পুরসভার বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তোলা হত। পুরসভার ওএমআর শিট তৈরি থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী, চালক, খালাসি, পিওন, করণিক-সহ বিভিন্ন পদে প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া, ইন্টারভিউ ও শেষে ফল প্রকাশের দায়িত্বে ছিল অয়ন শীলের সংস্থা। সেই সূত্র ধরে একেকটি পদের জন্য একেকরকমের দর হাঁকতেন অয়ন। বিভিন্ন পদের জন্য দুই থেকে দশ লাখ পর্যন্ত টাকা নেওয়া হত। এই ব্যাপারে অয়ন শীলকে জেরা করে ইডির গোয়েন্দারা জেনেছেন, প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে কমিশন নিতেন অয়ন।
ইডি আধিকারিকদের কাছে অয়নের দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে যতই টাকা নেওয়া হোক না কেন, তিনি ‘একলাখি’ কমিশনে অনড় ছিলেন। অর্থাৎ চাকরিপ্রার্থী পিছু তিনি এক লাখ টাকা কমিশনই নিজের কাছে রাখতেন। এই টাকা নগদে রাখতেন। বাকি টাকা তিনি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের দিতেন বলে দাবি অয়নের। ওই প্রভাবশালীদের মধ্যে ছিলেন পুরকর্তারাও। সেইমতো ইডি’র হিসাব অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে প্রায় আট হাজার চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তুলেছেন। ফলে শুধু ‘একলাখি কমিশনে’ই যে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে অয়ন অন্তত ৮০ কোটি টাকা তোলেন, তার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে ১২ কোটি টাকা তিনি কোন কোন জায়গা থেকে তোলেন, সেই তথ্য রয়েছে হার্ড ডিস্কের একটি ফোল্ডারে। সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি।