অর্ণব আইচ: পার্ট টাইম চাকরির নামে বিপুল টাকা হাতানোর পিছনে সেই চিনা জালিয়াতরাই। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে তা পাচার হয়েছে চিনে। এমনই অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED)। ইডির গোয়েন্দারা এই জালিয়াতি চক্রের মাথায় থাকা ৬ জন চিনা ও তাইওয়ানের বাসিন্দাকে শনাক্ত করেছেন।
সম্প্রতি কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে উঠে এসেছে এই ধরনের অভিযোগ। তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশও। যদিও এই ব্যাপারে তদন্তের পর ইডি নিশ্চিত যে, এর পিছনে রয়েছে চিনা জালিয়াতদের চক্র। ইডির সূত্র জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় যুবক-যুবতীদের ‘পার্ট টাইম’ চাকরির টোপ দেওয়া হয়। বলা হয়, তাদের পাঠানো ইউটিউবে সেলিব্রিটিদের ভিডিও লাইক করে শেয়ার ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করলেই কুড়ি টাকা করে দেওয়া হবে। ওই টাকা পাওয়ার লোভে অনেকেই এই ‘টাস্ক’ করতে শুরু করে।
[আরও পড়ুন: ছাত্রকে ওঠবস করিয়েছে কেন? ‘অপরাধে’ স্কুলে ঢুকে শিক্ষককে মার অভিভাবকদের]
‘কিপশেয়ারার’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের এই কাজটি করতে হয়। এই অ্যাপটির সঙ্গে যোগ রয়েছে একটি ঋণ অ্যাপেরও। এর পর ওই যুবক যুবতীদেরই বলা হয়, আরও টাকা রোজগার করতে চাইলে তারা যত টাকা রোজগার করছে, তা লগ্নি করতে। ওই টাকা লগ্নি করলেই তার বদলে ওই যুবক-যুবতীরা অল্পদিনের মধ্যেই হাতে পাবে বিপুল টাকা। এমনকী, এক মাসের মধ্যেই ওই টাকা কয়েক গুণও হয়ে যাবে বলে টোপ দেওয়া হয়। ওই ফাঁদে পা দিয়েই বহু যুবক-যুবতী টাকা লগ্নি করতে শুরু করে। প্রথম দিকে কিছু টাকা ফেরত দিতে শুরু করা হয়। হঠাৎই বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই অ্যাপটি। প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি সরিয়ে ফেলা হয়। ওই জালিয়াতির ফলে বিপুল টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার হয়েছে, এমন তথ্য পেয়েই তদন্ত করতে শুরু করে ইডি।
তদন্তে ইডি জানতে পারে যে, টাকা পাচারের জন্য চিনা জালিয়াতরা একাধিক বেসরকারি সংস্থা তৈরি করে। ওই সংস্থাগুলিতে ভারতীয় অধিকর্তা, চিনা ম্যান্ডারিন ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদক, এইচ আর ম্যানেজার ও টেলিকলার নিয়োগ করা হয় চিন থেকেই। ইডির গোয়েন্দারা এরকম অন্তত ৬টি বেসরকারি সংস্থার হদিশ পেয়েছেন, যেগুলি আসলে পরিচালনা করা হচ্ছে চিনে বসেই। তাঁরা ওই সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারি করেই জানতে পারেন যে, জালিয়াতির বিপুল টাকা এসে পৌঁছয় ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্টগুলিতে। ওই টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পরিবর্তন করা হয়। সেগুলি ফের চিনের নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পরিবর্তন করে চিনা জালিয়াতরা।
[আরও পড়ুন: নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে তীব্র বিতর্কে বাংলাদেশি পেসার, চাপের মুখে চাইলেন ক্ষমা]
ইতিমধ্যেই ইডি বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। তার মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পাচার হওয়ার টাকার পরিমাণ ৭১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যদিও এর থেকে অনেক বেশি পরিমাণ টাকা চিনে পাচার হয়েছে বলে অভিমত গোয়েন্দাদের। সেই টাকারও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে ইডি।