অর্ণব আইচ: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের (Ayan Sil) কাছ থেকে উঠে এল আরও এক ‘রহস্যময়ী’র নাম। লাখ লাখ টাকার জমি কেনাবেচায় ওই মহিলার নাম ব্যবহার করেছেন নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত অয়ন শীল। এবার ওই মহিলার সন্ধান শুরু করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। তদন্তের খাতিরেই ওই মহিলাকে তলব করে জেরা করার জন্য নোটিস পাঠাবেন ইডি আধিকারিকরা। যদিও এই মহিলার পরিচয় ঘিরে সন্দেহে তাঁরা। তাঁর সঙ্গে অয়নের কীভাবে ও কতটা যোগাযোগ ছিল, তা নিয়ে গোয়েন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ‘রহস্যময়ী’র নাম লীলা গুপ্তা। এর আগেই অয়নের বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীর সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁর নামে যে একাধিক সম্পত্তি, গাড়ি কেনা হয়েছিল, সেই তথ্য এসেছে ইডির কাছে। ইতিমধ্যে তাঁকে তলব করে জেরাও করেছে ইডি। এবার ইডির তদন্তে উঠে এসেছে লীলা গুপ্তা নামে আরও এক মহিলার নাম। তদন্তে ইডি আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন যে, এই লীলা গুপ্তার নামেই অয়ন শীল সম্পত্তি কিনেছেন। আবার বিক্রিও করেছেন সম্পত্তি।
[আরও পড়ুন: কাটমানির ভাগ নেন দেব! বিস্ফোরক অভিযোগ হিরণের, পালটা দিল তৃণমূলও]
অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ইডি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে (Bhangar) একটি জমির নথি উদ্ধার করে। সেই নথি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে লীলা গুপ্তা নামে ওই মহিলা জমিটি কেনেন হীরালাল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। দু’কাঠা ওই জমির দাম দেখানো হয় ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা। তার জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয় ১৭ হাজার ৩২৫ টাকা ও জমির রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ৩৮০৬ টাকা। আবার অন্য একটি নথি ঘেঁটে ইডি আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন যে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অয়ন শীল একটি জমি কেনেন। চার কাঠার সেই সম্পত্তিটি অয়ন শীল ও শমীক চৌধুরি যৌথভাবে বিজয়কুমার পাণ্ডে ও লীলা গুপ্তার কাছ থেকে কেনেন দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে।
এই দু’টি কেনাবেচার ক্ষেত্রেও সন্দেহ হয় ইডির গোয়েন্দাদের। কারণ, লীলা গুপ্তা ভাঙড়ের সম্পত্তি যে হীরালাল বিশ্বাসের নামে কিনেছিলেন, সেই ব্যক্তিই আবার ভাঙড়ের অন্য একটি জমি বিক্রি করেছেন বিজয়কুমার পাণ্ডেকে। এই বিজয়কুমার পাণ্ডে আবার লীলা গুপ্তার সঙ্গে যৌথভাবে দশ লাখের সম্পত্তিটি বিক্রি করেছেন। আবার এই প্রত্যেকে যাবতীয় সম্পত্তির নথিপত্রই ছিল অয়ন শীলের অফিসে। ফলে এই লীলা গুপ্তা ও অন্যদের জমি কেনাবেচার বিষয়টি রীতিমতো গোলকধাঁধার মতো লেগেছে ইডির গোয়েন্দাদের।
[আরও পড়ুন: ‘৩০ লক্ষ টাকা বাস ভাড়া, ভেবেছি পথে মরলে মরব’, ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সুদান ফেরত বাংলার যুবকের]
ইডির আধিকারিকরা জানান, জমি কেনাবেচার মতো ব্যাপারে অয়ন শীল বিভিন্ন ব্যক্তিকে ‘ব্যবহার’ করতেন। সেই ক্ষেত্রে লীলা গুপ্তা নামে ওই মহিলার নাম উঠে আসায় এবার তাঁকে কেন জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইডি আধিকারিকরা। ইডির মতে, সম্পত্তির নথিতে লীলা গুপ্তার পরিচয়, ঠিকানা ও পরিচয়পত্রের কপি রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই লীলা গুপ্তার বাড়িতে নোটিস পাঠানো হবে। সেই নোটিস জায়গামতো পৌঁছলে এবং লীলা গুপ্তা সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিলে তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হবেন। যদি তাঁর কোনও সন্ধান না মেলে, তবে লীলা সত্যিই ‘রহস্যময়ী’ হয়ে থাকবেন বলে জানিয়েছে ইডি।