shono
Advertisement
Car Racing

গতির গ্রাস, রেষারেষির দৌরাত্ম্য

সাম্প্রতিক একটি গাড়ি দুর্ঘটনা-জনিত মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিল।
Published By: Kishore GhoshPosted: 08:54 PM Feb 26, 2025Updated: 08:54 PM Feb 26, 2025

সাম্প্রতিক একটি গাড়ি দুর্ঘটনা-জনিত মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিল, রাস্তায় অহরহ রেষারেষির দৌরাত্ম্য থেকে কি আদৌ মুক্ত হবে জন পরিসর?

Advertisement

রবিবার গভীর রাত। খবরের বয়ান, পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং পুরনো জিটি রোড– এই দুই রাস্তার ২০ কিলোমিটার ধরে চলল দু’টি গাড়ির দুরন্ত দ্রুতির রেষারেষি। এবং এই মৃত্যুদৌড় ক্রমশ পৌঁছল এমন এক অর্বাচীন গতিতে, যার নিয়ন্ত্রণ আয়ত্তের বাইরে। ফলে যা ঘটার, তা-ই ঘটল। অপেক্ষাকৃত ছোট গাড়িটি গেল উলটে। আরোহিনী, ২৭ বছরের নৃত‌্যশিল্পী ও ইভেন্ট ম‌্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার, সুচন্দ্রা চট্টোপাধ‌্যায় সেই ভয়ংকর দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। খবরে প্রকাশ, তাঁর গ‌াড়িটাকে নাকি তাড়া করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, মনে পড়তে পারে, প‌্যারিসের সুড়ঙ্গে রাত্রিবেলা পাপারাৎজিদের তাড়া খেয়ে রুদ্ধশ্বাস গতির রেষারেষিতে ডায়ানা এবং তাঁর প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের মৃত্যু। এ-কথা ঠিক, আমরা বাস করছি বিপুল ব‌্যস্ততা এবং গর্হিত গতির যুগে। দুর্বার দ্রুতির বিরুদ্ধে প্রত‌্যহের সংসারে মাঙ্গলিক বারণের অভাব নেই। ‘অত জোরে বাইক চালাসনি’ বা ‘সাবধানে গাড়ি চালিও’– এই বারণ কানে নিয়ে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরয়। কিন্তু রাস্তায় নামলেই অনেকের ঘাড়ে চাপে রেষারেষির রোষ। মঙ্গলকামী সমাজ-সংসারের সাবধানবাণী তছনছ করে তারা শহরের রাস্তাকে বানিয়ে ফেলে মরণছুটের রেসকোর্স। শহরের রাস্তায়, বিশেষ করে আমাদের শহরে, কিংবা বলা উচিত, তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ শহরেই, এই অহরহ রেষারেষির ছবি শহুরে জীবনের অঙ্গ এবং সংকটে পরিণত হয়েছে।

গতির এই প্রাত‌্যহিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে পালানোর জো নেই। তৃতীয় বিশ্বের জীবনযুদ্ধ যতই হয়ে উঠছে নানাবিধ পরাজয়ে, হীনমন‌্যতায়, কিংবা ক্ষীণতায় ম্লান, ততই যেন বাড়ছে রাস্তায়-রাস্তায় গতির গর্জন, রেষারেষির দাপট। যেন পরাজিত অহংয়ের একমাত্র প্রকাশক্ষেত্র শহরের রাস্তা। উন্মাদ গতিতে পরস্পরের প্রতিযোগী বাস, উন্মত্ত গতির ও গর্জনের বাইক, উদ্‌ভ্রান্ত ড্রাইভারের হাতে ভিনদেশি গতির গাড়ির স্টিয়ারিং– এই নিত‌্য প্রলয়ের প্রতিবেদন আমাদের কি প্রায় প্রত‌্যহ পড়তে হয় না সংবাদপত্রে, বেদনার্ত সকালবেলা? এর থেকে কবে বেরব আমরা?

নিজের ‘স্লোনেস’ উপন‌্যাসটিকে এই প্রশ্নের চারধারে গড়ে তুলেছেন মিলান কুন্দেরা। একদিকে গতির সাধনায় ও সৃজনে মত্ত মানবসভ‌্যতা। অন‌্যদিকে একটি বাগানের মধ্যে একা মানুষের ধীর সঞ্চার। রাস্তায় দুরন্ত গতির ভাবনাহীন গতি। আর বাগানে একটি মানুষ হেঁটে চলেছে। সে গভীর ভাবনা বা প্রসারিত স্মৃতিচারণে মগ্ন। কুন্দেরা বলছেন, উন্মত্ত গতি সভ‌্যতাকে কী দেবে? অনেক বেশি দিতে পারে বরং, বাগানের মধে‌্য নিঃসঙ্গ মানুষটির ধীরগতি, মনকেমন। ‘স্লোনেস’ উপন‌্যাসে দু’-ধরনের প্রেমকে তুলনামূলক নৈকট্যে রেখেছেন কুন্দেরা। একটি প্রেম তড়িৎগতির চাওয়া-পাওয়ার। যেন ঝোড়ো হাওয়ার মুখে অসহায় ফুল। অন‌্য প্রেমে কোনও তাড়া নেই। সেই গতিহীন সম্পর্ক হঠাৎ যেন স্পর্শ করে অনন্তকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • প‌্যারিসের সুড়ঙ্গে রাত্রিবেলা পাপারাৎজিদের তাড়া খেয়ে রুদ্ধশ্বাস গতির রেষারেষিতে ডায়ানা এবং তাঁর প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের মৃত্যু।
  • নিজের ‘স্লোনেস’ উপন‌্যাসটিকে এই প্রশ্নের চারধারে গড়ে তুলেছেন মিলান কুন্দেরা।
Advertisement