রাজস্থানে দলিত যুবক নিগৃহীত হল উচ্চবর্ণের বিয়ের শোভাযাত্রা দেখার দায়ে! এ কোন সমাজ, যেখানে পদবি নির্ধারণ করে মানুষের ভাগ্য!
আরও একজন দলিত তরুণ উচ্চবর্ণের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হলেন। অকুস্থল, বিজেপিশাসিত রাজস্থানের সীকর জেলার একটি গ্রাম। গত ৮ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটলেও তা প্রকাশ্যে আসে ১৬ এপ্রিল। বছর উনিশের তরুণ নিজ-গ্রামে একটি বিয়ের শোভাযাত্রা দেখতে গিয়েছিলেন। তখন দুই অভিযুক্ত তঁাকে কিছু কাজের কথা বলার জন্য স্থানীয় বাস স্টপে ডাকে। সেখানে তঁাকে প্রচণ্ড মারধোর করা হয়, জাত-সম্প্রদায় তুলে কটূক্তিও চলে। তরুণের অভিযোগ, তঁার গায়ে প্রস্রাব করা হয়েছে, যৌন নিগ্রহও। অভিযুক্তরা আবার পুরো ঘটনাটির মোবাইলে ভিডিও করে। পুলিশে বা কাউকে এই ঘটনা জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নির্যাতিতের পরিবার এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, তারা প্রথমে থানায় অভিযোগ করতে যায়নি। পরে, সাহস সঞ্চয় করে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। নির্যাতিতের অভিযোগের ভিত্তিতে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্বাধীনতার ৭৫ বছরেরও বেশি সময় পরে, সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি এবং আইনি রক্ষাকবচ সত্ত্বেও, এই ধরনের বর্বরতা ঘটছে দেশে? এ তো শুধু জাতিগত বিদ্বেষের প্রতিফলন নয়, আমাদের সম্মিলিত নৈতিক অবক্ষয়ের ছবিকেও তুলে ধরে। আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেখানে জাতপাতের নামে লক্ষ-লক্ষ মানুষের মানবাধিকার অস্বীকার করা হয়। রাজস্থানের ঘটনাটি তাই বিচ্ছিন্ন দৃষ্টান্ত নয়। দেশের মধ্য-পশ্চিমাংশের গোবলয় হোক, কিংবা দক্ষিণের রাজ্য– সর্বত্র দলিত-নিগ্রহের ঘটনা ঘটে থাকে, নিয়মিত ব্যবধানে। সামান্যই প্রকাশ্যে আসে।
বর্ণপ্রথা, বিশেষত, তথাকথিত ‘দলিত’-এর বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব একটি সামাজিক ষড়যন্ত্র। কয়েক শতাব্দী ধরে পরিকল্পিত ও স্থায়ীভাবে কিছু সুবিধাভোগী মানুষের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে ও অনেকের মর্যাদাকে চূর্ণ করার জন্য এই ষড়যন্ত্র। সহ-নাগরিকের ছায়াকে অপবিত্র মনে করা দেবত্বের বাণী নয়– সামাজিক ব্যাধির লক্ষণ, আর তা সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যে বাসা বেঁধে রয়েছে। এই বৈষম্য সভ্যতার পতন। আমরা এ কোন সমাজ গড়ে তুলছি, যেখানে একজন যুবকের ‘দলিত’ হওয়ার জন্য নির্যাতিত হওয়ার পরেও পুলিশে অভিযোগ জানাতে মানুষ ভয় পায়!
প্রশ্ন করার সময় এসেছে: আমরা কি সত্যিই মানুষ হয়েছি? না কি আমরা এখনও অন্ধকার যুগেই আটকে– যেখানে মানবিকতা নয়, ব্যক্তির পদবি তঁার ভাগ্য নির্ধারণ করে? এই ধরনের প্রতিটি নৃশংসতা, প্রতিটি অবিচার, প্রতিটি অপমান, আসলে বৃহত্তর এক প্যাটার্নের অংশ। যা সহ-নাগরিকদের নীরবতা, প্রশাসনের উদাসীনতা, রাজনীতির স্বার্থ দ্বারা অক্ষত থাকে। এ শুধু শাসনের ব্যর্থতা নয়, বিবেকের ক্ষতও।