shono
Advertisement
Landslide

ধস ও ধ্বংস

উত্তরাখণ্ডর চামোলি জেলার মানায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘটল এক আকস্মিক হিমবাহ-বিস্ফোরণ।
Published By: Kishore GhoshPosted: 10:19 PM Mar 02, 2025Updated: 10:19 PM Mar 02, 2025

সেন্সরের মাধ‌্যমে এবার ধসের পূর্বাভাস জানা যাবে। কিন্তু ধস বা ল‌্যান্ডস্লাইড-বর্জিত জীবন কি পৃথিবীর কোথাও কখনও সম্ভব?

Advertisement

প্রকৃতি যত দিন জীবন্ত থাকবে, নিরন্তর থাকবে সৃজনে, তত দিন ক্রমান্বিত হবে তার ধ্বংসলীলা। শেলি তাঁর এক বিখ‌্যাত কবিতায় প্রকৃতির এই দ্বিখণ্ডিত রূপকে অব‌্যর্থ বর্ণনায় বলেছেন, ‘ডেস্ট্রয়ার’ এবং ‘প্রিজার্ভার’। প্রকৃতি এক হাতে করছে সংহার ও ধ্বংস। অন‌্য হাতে সে করছে রক্ষা, জানাচ্ছে বরাভয়। প্রকৃতির এই দুই রূপকে মেনে না নিয়ে আমাদের উপায় নেই। কেননা, মহাবিশ্বজুড়ে চলছে সৃষ্টি ও ধ্বংস, জন্ম ও মৃত্য়ুর মিলনলীলা।

উত্তরাখণ্ডর চামোলি জেলার মানায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘটল এক আকস্মিক হিমবাহ-বিস্ফোরণ। এবং এই বিস্ফোরণের ফলে ভোরবেলা নামল তুষারধস। ক’দিন ধরেই হিমাচল প্রদেশে প্রবল বৃষ্টি চলছিল। ‘অরেঞ্জ অ‌্যালার্ট’-ও দেওয়া হয়েছিল। তবু বদ্রীনাথ মন্দির থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে সেই বৃষ্টির মধ্যেই সীমান্তের গ্রাম মানায় কাজ করছিলেন ‘বর্ডার রোড অরগানাইজেশন’-এর ২২ জন কর্মী। তাঁদের উপর হঠাৎ নেমে এল পাহাড় থেকে তুষারধস। এবং ২২ জনকেই চাপা পড়তে হল ধসের নিচে। তবে ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১১ জনের খেঁাজ চলছে। কিন্তু বৃষ্টি ও তুষারঝড়ের প্রাবল‌্য এবং চারধার থেকে তেড়ে আসা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পথ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রকৃতির সংহারশক্তির সামনে মানুষ এখনও কত অসহায়, তা তো পৃথিবীজুড়ে প্রত‌্যহই প্রমাণিত হয়ে চলেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে একটি সুখবরও এসেছে। সুখবর হল, ভারতের প্রতিটি ধসপ্রবণ এলাকায় সেন্সর লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ধসপ্রবণ এলাকাগুলিতে মানুষ আগে থেকে জানতে পারবে, কবে কোথায় ধস নামতে পারে। ইতিমধ্যেই ‘জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ চালু করেছে ‘ন‌্যাশনাল ল‌্যান্ডস্লাইড ফোরকাস্টিং সেন্টার’। ফলে ক্রমশই আমরা ধসের পূর্বাভাস জানতে ও জানাতে পারার দিকে এগচ্ছি।
কিন্তু সমস‌্যা হল, ধস বা ল‌্যান্ডস্লাইড-বর্জিত জীবন কি পৃথিবীর কোথাও কখনও সম্ভব? এই প্রসঙ্গে মনে পড়তে পারে তলস্তয়ের ‘অ‌্যানা কারেনিনা’ উপন‌্যাসের শুরুর উক্তি: ‘অল হ‌্যাপি ফ‌্যামিলিজ রিজেম্বল ওয়ান অ‌্যানাদার; ইচ আনহ‌্যাপি ফ‌্যামিলি ইজ আনহ‌্যাপি ইন ইটস ওন ওয়ে...।’ অর্থাৎ সুখের গল্প একঘেয়ে।

কিন্তু এক-এক পরিবারের দুঃখের গল্প, ধস ও ধ্বংসের গল্প এক-এক রকম। জীবনে, পরিবারে, সংসারে কত প্রকৃতির ধস যে নামতে পারে, তা জানার উপায় অসম্ভব। এমন কোনও সেন্সর যাপনের অঙ্গে বসানো যাবে কি– যে-সেন্সর জানাবে সমস্ত আসন্ন ধস ও বিপর্যয়ের পূর্বাভাস? তা যদি সম্ভব হয়, তাহলে যাপন থেকে খসে পড়বে অজানা ভবিষ‌্যতের সব রং, অচেনা আগামীর সব আশা ও সংশয়। এবং ল‌্যান্ডস্লাইডের এই রোমান্সও লুপ্ত হবে জীবন থেকে: ‘ইফ ইউ সি মাই রিফ্লেকশন ইন দ‌্য স্নো-কভার্ড হিল্‌স, ওয়েল, দ‌্য ল‌্যান্ডস্লাইড উইল ব্রিং ইট ডাউন...।’ অনেক উপরে বরফঢাকা পাহাড়ে দেখা ইথারদুহিতার প্রতিবিম্বকে ধসই তো নামিয়ে আনতে পারে প্রাত‌্যহিক যাপনের বাস্তবে। মন্দ কী!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • প্রকৃতির সংহারশক্তির সামনে মানুষ এখনও কত অসহায়, তা তো পৃথিবীজুড়ে প্রত‌্যহই প্রমাণিত হয়ে চলেছে।
  • কিন্তু এক-এক পরিবারের দুঃখের গল্প, ধস ও ধ্বংসের গল্প এক-এক রকম।
Advertisement