ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মামলায় এলাহাবাদ হাই কোর্টের লাগাতার বিতর্কিত রায় প্রদান, নারীদের প্রতি যোগীরাজ্যের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি চেনায়।

ধর্ষণের মামলায় ফের একটি বিতর্কিত রায় দিয়েছে এলাহাবাদ হাই কোর্ট। নয়ডার এক ছাত্রী অভিযোগ করে যে, দিল্লির এক পানশালায় গভীর রাত পর্যন্ত মদ্যপান করার পর তার এক যুবক সঙ্গী তাকে গুরুগ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। খুব স্বাভাবিকভাবেই অভিযুক্ত যুবকের দাবি– সে ওই তরুণীর সঙ্গে তার সম্মতির ভিত্তিতেই সহবাস করেছে। এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি অভিযুক্তের দাবিকে মান্যতা তো দিয়েইছেন, উলটে রায়ে বলেছেন, যদি ধরেও নেওয়া হয় যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তাহলে সেক্ষেত্রে তরুণী তার দায় এড়াতে পারে না। অর্থাৎ, ওই তরুণী পানশালা থেকে যুবক সঙ্গীর বাড়িতে কেন গিয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলতে চেয়েছে আদালত। অভিযুক্ত যুবক জামিন পেয়েছে। অভিযোগকারিণী আদালতের চোখে দোষী প্রমাণিত হয়েছে।
কয়েকদিন আগে এলাহাবাদ হাই কোর্টের আরও একটি রায় বিতর্ককে পৌঁছে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলায় এলাহাবাদ হাই কোর্ট রায়ে বলেছিল, নাবালিকার পাজামার দড়ি ছেঁড়া বা তার স্তনে হাত দেওয়া ধর্ষণ নয়। স্তম্ভিত হন অনেকেই। এলাহাবাদ হাই কোর্ট যখন একের পর এক বিতর্কিত রায় দিয়ে চলেছে তখন যোগী আদিত্যনাথ শাসিত রাজ্যে নারী নির্যাতনের বেনজির ঘটনাও ঘটে চলেছে।
কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে হুক্কা বারে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন যুবক মাদক খাওয়ায় বলে অভিযোগ। তারপর সাতদিন ধরে তাকে একটি বাড়িতে আটকে রেখে ২১ জন যুবক মিলে ধর্ষণ করে। তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর বারাণসী সফরে এসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অভিযুক্তদের সবাইকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন এইরকম উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তখন কি তিনি এটা মাথায় রাখছেন যে তাঁর দল শাসিত রাজ্যে উচ্চ আদালত একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় কী রায় দিয়ে চলেছে? এলাহাবাদ হাই কোর্টের রায় নারীদের সম্পর্কে রাজ্য প্রশাসনের সামগ্রিক একটি দৃষ্টভঙ্গিরই প্রতিফলন নয় কি?
উন্নাও-হাথরসের তালিকাতেই নাম লেখাল বারাণসীর সাম্প্রতিক ঘটনাটি। প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করায় আপাতত তা কিছুদিন প্রশাসনের নজরে থাকবে। হয়তো অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা হবে। প্রশ্ন হল, কিছুদিন পর যখন সবার স্মৃতি থেকে ঘটনাটি মুছে যাবে, তখন কি নির্যাতিতার পরিণতি নয়ডার ওই ছাত্রীর মতো হবে? এক্ষেত্রেও হয়তো কোর্টে প্রশ্ন তোলা হবে যে, কেন ওই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তার পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে হুক্কা বারে যায়?
হতেই পারে। কারণ বিজেপিশাসিত রাজ্যে প্রশাসন নারীদের সম্পর্কে যে দৃষ্টভঙ্গি নিয়ে চলছে, তাতে গোটা সমাজে পশ্চাদমুখী মানসিকতা প্রকাশে প্রশ্রয় পাচ্ছে। আসল উদ্বেগের জায়গা কিন্তু এটাই।