shono
Advertisement

মেসি-আবেগের সীমান্ত জয় করে প্রস্থান সিআরের

Posted: 12:37 PM Dec 12, 2022Updated: 12:37 PM Dec 12, 2022

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: মাধ্যাকর্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে দিগন্তছোঁয়া লাফগুলো আর উঠবে না বিশ্বকাপে। গর্বিত গ্রীবা আর উদ্ধত দৌড় নিয়ে কাপ-গ‌্যালারির দিকে আর ছুটেও যাবে না ওই চেনা অবয়ব। ক্লাব ফুটবলে এখনই না হলেও ভবিষ‌্যৎ-বিশ্বকাপে অন্তত আর লোকটার জ্বালাতন সহ‌্য করতে হবে না লালমুখো মিডিয়া আর বিশেষজ্ঞকুলকে। বিশ্বকাপ এলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদেরও আর রাতের ঘুম নষ্ট হবে না, ক্রস ক্লিয়ারের সময় আতঙ্কিত দৃষ্টিতে দেখতে হবে না শূন‌্যে ‘ভাসমান’ সেই শরীর। প্লেয়ার আর পৃথিবীর মহাযুদ্ধে এরপর মাধ‌্যাকর্ষণের টান জিতবে বারবার, আগে জিতত যেমন। শনিবারের পর শেষ, সব শেষ। কান্নার ‘টানেল’ ধরে যে বিশ্বকাপ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো! আগামীতে বিশ্বকাপ আবারও থাকবে। পর্তুগালও নামবে। শুধু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Christiano Ronaldo) আর নামবেন না।

Advertisement

কাতার-বিদায়ের অনেক, অনেক পর, টানেলে ফুঁপিয়ে কান্নার পর, রবিবার রাতের দিকে দেখা গেল ফুটবলের চিরশ্রেষ্ঠ ‘নাম্বার সেভেন’ একটা আবেগঘন পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে। যেখানে তিনি কাপ-স্বপ্ন অকস্মাৎ ধুলিস‌্যাৎ হওয়া নিয়ে লিখেছেন, লিখেছেন তাঁর দায়বদ্ধতার প্রতি দেশজ মিডিয়ার বেয়াদপির আঙুল তোলা নিয়ে। কিন্তু রোনাল্ডো কোথাও লেখেননি আগামীতে কী করবেন তিনি। বলেননি, দেশের হয়ে আরও খেলা চালিয়ে যাবেন কি না। নতুন করে বলেননি, দু’বছর পর ইউরো খেলবেন কি না। কিন্তু একটা কথা না বলেও বড় সশব্দে বলে দিয়েছেন গত রাতে–আর যা-ই খেলুন না খেলুন, বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) তিনি আর খেলবেন না! স্বপ্নের একটা পাখিও বেঁচে থাকলে কেউ অমন ঝরঝরিয়ে কাঁদে নাকি?

আপনি যদি ফুটবলকে ভালবাসেন, হৃদয়ের ঠাকুরঘরে ফুটবল-বিগ্রহকে পুজো করেন, গত রাতের কাতার দেখার পর হু হু করে চোখে জল আসা উচিত। কতটা দুঃখ পেলে মানুষ অতটা কাতর হয়? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে এত দিন লোকে জানত, ফুটবলের লৌহমানব বলে। জানত, প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর যত অপরাজেয় হবে, রোনাল্ডো ঠিক তত জোরে প্রত‌্যুত্তরের ফ্রি কিক মেরে তা ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবেন। কিন্তু শনিবারের কাতারে তাঁকে বড় মানুষ-মানুষ লাগল। যে নিয়তির কাছে হেরে গিয়ে নতজানু হয়ে মাঠে বসে পড়ে, বিদ্রোহের ন‌্যূনতম দুন্দুভি না বাজিয়ে, যার চোখ থেকে ছিটকে বেরোয় কান্না। করতেনও বা কী রোনাল্ডো? বিলিতি মিডিয়ার হিসেব অনুযায়ী, মরক্কোর বিরুদ্ধে সাকুল‌্যে গোটা এগারো ‘টাচ’ ছিল তাঁর বলে। সঠিক গোনাগুনতি করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দৃষ্টিতে আহামরি কিছু ধরাও পড়েননি। জোয়াও ফেলিক্সকে একটা তুখোড় পাস। আর ডিফেন্ডার টেনে নিয়ে গিয়ে মরক্কো গোলকিপারের গায়ে নিষ্ফলা শট। পুরাকালে যা গোলকিপারের ফ‌্যালফ‌্যালে দৃষ্টিকে পাশ কাটিয়ে জাল কাঁপিয়ে চলে যেত।

[আরও পড়ুন: জাতীয় দলে দাপট বাংলার রিচার, অস্ট্রেলিয়াকে সুপার ওভারে হারাল ওমেন ইন ব্লু]

দেখতে গেলে, এক দাপুটে বলওয়ালার যন্ত্রণার মহাপ্রস্থান। ঠিকই, বিশ্বকাপ থেকে বিদায়বেলায় কিছুই তো পেলেন না রোনাল্ডো। টিম ছিটকে গেল, নিজের দু’টো পা বিশ্বাসঘাতকতা করল, যে হেডের জন‌্য এত বিখ‌্যাত ছিলেন তিনি, সে-ও তো শেষবেলায় সময়ের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগ করে উঠতে পারল না। সঙ্গে আবার জুড়ে দিতে হবে দলা দলা অপমান, রিজার্ভ বেঞ্চের অবজ্ঞা। কিন্তু সাদা চোখের আয়নার বৃহত্তর লাভ ধরা পড়ে না সব সময়। কাতারের বিষাদ-রাত থেকে রোনাল্ডো পেলেন এমন একটা জিনিস, যা এত দিন শ’য়ে শ’য়ে গোল করেও কখনও পাননি। মেসি-আবেগের সীমান্ত জয়!

মরক্কো ম‌্যাচের শেষলগ্নে রোনাল্ডোর গোল মিসের মতোই এটাও সমান অত‌্যাশ্চর্য যে, গত রাতে সিআরের সঙ্গে শুধুমাত্র তাঁর উপাসককুল ডুকরে কাঁদেনি। কেঁদেছেন তাঁরাও, যাঁরা এত দিন বরাবর কোনও এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর প্রতি নাক সিঁটকানি বরাদ্দ রেখে চিরশ্রেষ্ঠর রাজমুকুট লিওনেল মেসিকে দিয়ে এসেছেন! ফেসবুক-টুইটারের পৃথিবীতে ঘুরুন, পেয়ে যাবেন খোঁজ। এক-আধজন নয়, হাজার-হাজার মেসি-ভক্ত গত রাতে কাতরাতে কাতরাতে লিখে ফেলেছেন, সিআরের এই যন্ত্রণার বিদায় তাঁরা চাননি। কেউ লিখেছেন, লিওনেল মেসি (Lionel Messi) আজ লিওনেল মেসি হতেই পারতেন না একটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো সমান্তরাল ভাবে না থাকলে। বিশ্বসেরাকেও যে সময় সময় দর্পণে প্রতিদ্বন্দ্বীর ছায়া দেখতে হয়, নিজেকে বুঝে নিতে। বরাবর গ্রহান্তরের দুই ফুটবলারের ভক্তকুলের মধ‌্যে আবেগের একটা সতর্ক সীমান্ত থেকেছে। একদল বেছে নিয়েছে শ্রেষ্ঠকে, লিওনেল মেসিকে। আর একদল আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে প্রতিস্পর্ধীকে, কোনও এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে, শ্রেষ্ঠকেও যে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়ে দিয়েছিল! জীবনে এই দুই ভক্তকুলে কোনও আপস হয়নি, যা হয়েছে শেষে শনিবারে এসে। এ জিনিস পায় ক’জন?

আর পড়ে রইল বিশ্বকাপ, সে তো কত লোকেই পাননি। জিকো পাননি। সক্রেটিস পাননি। রাইকার্ড পাননি। খুলিট পাননি। বাজ্জো পাননি। কিন্তু তাতে তাঁদের ফুটবল-জাদুর দেওয়ালে কখনও ধুলো জমেনি। আসলে বিশ্বকাপ আসে-যায়, প্লেয়ার তার প্রভাবে থাকে অক্ষয়। আর কে-ই বা দিব‌্যি দিয়েছে, পেতে হবে সব কিছু? সব পেলে যে নষ্ট জীবন!

[আরও পড়ুন: ‘আমার কাছে তুমিই সর্বকালের সেরা’, রোনাল্ডোকে আবেগঘন বার্তা বিরাট কোহলির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement