বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের পর্বে আর্জেন্তিনার মুখোমুখি হতে চলেছে প্যারাগুয়ে। তার আগে জারি হল অবাক-করা নিষেধাজ্ঞা!
১৯ নভেম্বর, ২০০৫। এস্তাদিও সান্তিয়াগো বের্নাবেউ, যা কিনা রিয়াল মাদ্রিদের নিজস্ব মাঠ, প্রত্যক্ষ করেছিল এক আশ্চর্য দৃশ্যের– ‘এল ক্লাসিকো’, অর্থাৎ চিরশত্রু বার্সেলোনার সঙ্গে রিয়ালের টক্কর। সে-ম্যাচে বার্সার ‘গেমমেকার’ রূপে রোনাল্ডিনহো যে-পারফরম্যান্স দিয়েছিলেন, তা আধুনিক ফুটবলেতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগত আলোর ঝলকানি বলে গণ্য হয়। তিন গোলে বার্সা জেতে, তার মধ্যে দু’টি গোল রোনাল্ডিনহোর। তঁার খেলার জাদুতে এমনই মুগ্ধ হয়েছিল রিয়াল-ফ্যানেরা যে, উঠে দঁাড়িয়ে সংবর্ধনা দিতে কুণ্ঠিত হয়নি।
ইতোপূর্বে বার্সার হয়ে সেই কৃতিত্ব ছিল দিয়েগো মারাদোনার। এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই মনের গভীরে অনুরাগের চিরস্থায়ী দাগ কেটে যায়। সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই হচ্ছে যেখানে, সেখানে বিপক্ষের ফুটবলারকে যদি অন্যপক্ষের সমর্থকরা উজাড় ভালবাসায় ভরিয়ে দেয়, তাতে তো জয় হয় ফুটবলেরই। উচ্চাঙ্গের খেলা যে মনের সংকীর্ণতা দূর করে, কথাটা তো এমনি-এমনি বলা হয় না। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফুটবল সাক্ষী থাকল এমন ঘটনার, বলা ভাল, নিষেধাজ্ঞার, যেখানে আদতে মুখ পুড়েছে ফুটবলেরই।
আগামী ১৪ নভেম্বর, বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলায়, প্যারাগুয়ে মুখোমুখি হতে চলেছে আর্জেন্তিনার। খেলা হবে প্যারাগুয়ের ডিফেনসোরেস দেল চাকো স্টেডিয়ামে। এর প্রাক্কালে, এক আশ্চর্য বিবৃতি জারি করে ফুটবল-বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন প্যারাগুয়ের ফুটবল সচিব ফের্নান্দো ভিলাসবোয়া। তঁার কথায়, যদি কোনও দর্শককে আর্জেন্তিনার জাতীয় দলের জার্সিতে দেখতে পাওয়া যায়, বা আর্জেন্তিনার কোনও ক্লাবের জার্সিতে, বা লিও মেসি খেলেছেন বা খেলছেন এমন কোনও দলের জার্সিতেও– তাকে মাঠে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। ফের্নান্দো ভিলাসবোয়া বরং প্রত্যাশা করেন, ঘরের মাঠ ভরে থাকবে শুধু প্যারাগুয়ের জাতীয় দলের জার্সিতে! এর অর্থ: আর্জেন্তিনার সমর্থকদের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে যাওয়ার জো রইল না। এমনকী, প্যারাগুয়ের কোনও সমর্থক যদি মনে করে– মেসির ফুটবল-কীর্তি উদ্যাপন করতে ইন্টার মায়ামির জার্সি পরে মাঠে যাবে, সে গুড়েও বালি। এমন বিপক্ষ-শূন্য মাঠে খেলা হয়তো হবে, কিন্তু ফুটবলের রং-গন্ধ উন্মোচিত হবে তো!
‘পলিটিক্যাল ফুটবল’ একটি বিশেষ শব্দবন্ধ। যা ফুটবলের রাজনীতিকরণে বাধা দেয়, বা, কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে ফুটবলকে করে তোলে রাজনৈতিক প্রতিবাদের হাতিয়ার। ‘দ্য নিউ ইর্য়ক টাইম্স’-এর প্রবাদপ্রতিম কলাম-লেখক উইলিয়াম স্যাফায়ার তঁার “স্যাফায়ার’স পলিটিক্যাল ডিকশনারি’-তে লিখেছেন– এই শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক ও জাতীয় সুরক্ষাকে মান্যতা দেওয়া হয়, কখনও-বা অদলীয় কোনও ঘটনাকে করে তোলা যায় রাজনীতির অঙ্গ। কিন্তু লিও মেসির মতো ফুটবলের এত বড় ‘ইনফ্লুয়েন্সার’-কে আক্রমণের লক্ষ্য করে প্যারাগুয়ে কী স্তরের রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইল, তা নিয়ে ফুটবল-বিশ্বের ধারণা স্পষ্ট নয়। এতে কি ফুটবলের মহিমা বাড়ল? তা-ও ধেঁায়াশা-ঢাকা।