shono
Advertisement
Happiness

হিংসা ও ভয়মুক্ত সমাজই সুখী পৃথিবীর ঠিকানা

সুখের নিরিখে ভারত রয়েছে ১১৮ তম স্থানে।
Published By: Biswadip DeyPosted: 05:24 PM Mar 27, 2025Updated: 05:24 PM Mar 27, 2025

‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’-এ সুখের নিরিখে ভারত রয়েছে ১১৮ তম স্থানে। সুখ-সারণিতে ভারতের স্থান দেখিয়ে দিচ্ছে– আমরা সুখী নই। সুখের নিরিখে আমরা অনেক নিচে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের সুস্বাস্থ্য ও সম্মানের পক্ষে তা বড়ই অস্বস্তিকর। কিন্তু প্রশ্ন হল, সুখের নিরিখে দেশ এত পিছিয়ে কেন? লিখছেন মতিউর রহমান।

Advertisement

২০২৫ সালের ‘বৈশ্বিক সুখ-সূচক’ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্র সংঘ। এই রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হল ফিনল্যান্ড। এই নিয়ে টানা ৮বার পরপর তারা-ই প্রথম স্থানে। তালিকার দুই ও তিন নম্বরে রয়েছে ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। ১৪৭টি দেশের এই তালিকায় সবার নিচে রয়েছে আফগানিস্তান। এবারের সুখ-সারণিতে আমেরিকা ২৪ নম্বরে নেমে গিয়েছে। এটাই তাদের নিকৃষ্টতম র‍্যাঙ্কিং। যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্তাইন রয়েছে ১০৮ নম্বর স্থানে। অন্যদিকে, আর-এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইউক্রেন রয়েছে ১১১তম স্থানে। এ-বছর ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’-এ সুখের নিরিখে ভারত রয়েছে ১১৮ তম স্থানে।

বলা যেতে পারে, অসুখী-ই ভারত। গত বছরে ছিল ১২৬তম‌ স্থানে। গত বছরের তুলনায় আট ধাপ এগলেও দেশের অবস্থান পিছনের সারিতে। প্রশ্ন উঠছে, সুখের নিরিখে দেশ এত পিছিয়ে কেন?

এবারের তালিকায় ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে চিন অনেকটা এগিয়ে– ৬৮তম স্থানে। নেপাল ও পাকিস্তান ভারতের‌ চেয়ে এগিয়ে। তারা রয়েছে যথাক্রমে ৯২ ও ১০৯ তম স্থানে। তবে বাংলাদেশ রয়েছে তালিকার নিচের দিকে, ১৩৪ নম্বরে। শ্রীলঙ্কা একধাপ পিছিয়ে রয়েছে ১৩৫ তম স্থানে। ২০২৪ ও ২০২৩– এই দু’-বছর কিছুটা এগলেও পরিসংখ্যান বলছে, সুখী দেশের তালিকায় পিছনের দিকেই রয়েছে আমাদের দেশ। ২০১৫ সালে সুখের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল ১১৭। ২০১৬ সালে একধাপ পিছিয়ে হয় ১১৮। ২০১৭-তে ১২২। ২০১৮-এ ১৩৩। ২০১৯-এ ১৪০। ২০২০-তে ১৪৪। ২০২১-এ ১৪৯। ২০২২-এ ১২৬। সুখ-সারণিতে ভারতের স্থান দেখিয়ে দিচ্ছে– আমরা সুখী নই। সুখের নিরিখে আমরা অনেক নিচে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের সুস্বাস্থ্য ও সম্মানের পক্ষে তা বড়ই অস্বস্তিকর।

২০১২ সালে রাষ্ট্র সংঘর সাধারণ অধিবেশনে ২০ মার্চ দিনটিকে ‘বিশ্ব সুখ দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এই দিনটিতে আগের বছরগুলির মতো এবারও ‘বিশ্ব সুখ রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্র সংঘ। ১৪৭টি দেশের জীবনধারণের মান নিয়ে নাগরিকদের মতামত বিশ্লেষণ করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এবার সার্বিক মাপকাঠিতে ভারতের স্কোর কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৪,৩৮৯। মাথাপিছু জিডিপি, সামাজিক সহায়তা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা‌, উদারতা, দুর্নীতির ধারণা, নিরপেক্ষতা, পরিবেশ-সহ অন্যান্য মাপকাঠি এই সূচকের ভিত্তি। উদারতা ও দুর্নীতির মাপকাঠিতে ভারত বেশ পিছিয়ে রয়েছে বলে রিপোর্ট। শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা নয়, নির্মল আনন্দে সুখানুভূতি সৃষ্টি হয়। সমীক্ষায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের খোঁজখবর নেওয়া হয়। মানুষ একসঙ্গে বসে খাবার ভাগ করে খেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে কি না, বিপদে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়। দেশের মানুষ একে-অপরকে কতটা বিশ্বাস করে, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেলে সামাজিক বন্ধন বাড়ে, যা সুখবৃদ্ধি করে। পরিবারের সকলে একসঙ্গে বসে খেলে বা খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়াতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়‌, যা সুখবৃদ্ধিকারক। ক্রমবর্ধমান বিষাক্ত সংস্কৃতি, সামাজিক চাপ‌, কর্মসংস্থানে সংকট– বিষয়গুলি বিষাদ সৃষ্টি করছে, যা সুখানুভূতি সৃষ্টিতে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

মানুষ মুখে ‘ভালো আছি’ বললেই যে ভাল থাকা যায় না– সে সত্যটা ফুটে উঠেছে সুখ-সূচকের‌ রিপোর্টে। পরিবার‌, সমাজ ও দেশে মানুষ কতটা সুখী জানতে আইনশৃঙ্খলা কেমন, বাক্‌স্বাধীনতা কতটা রয়েছে, স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা, জিডিপি, সামাজিক উদারতা বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। স্বভাবতই বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতবাসী বলতে পারবে না যে, তারা সুখী। সুখের মানদণ্ড এক-একজনের কাছে এক-একরকম।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে সুখের দু’টি দিক রয়েছে– একটি মানসিক, আর একটি সামাজিক। কেউ অল্পতে সুখ পায়, আর কেউ-বা অনেক প্রাচুর্যেও পায় না। কিন্তু সামাজিক বিষয়টি জড়িত বহু উপাদানের সঙ্গে। ভালবাসা, উদার মানসিকতা, সহানুভূতি, পরোপকারিতা, মুক্তমন বা আনন্দে থাকার পরিবেশ সমাজে কতটা বিদ্যমান–

এসব প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তর আসায় মনে করা হচ্ছে সুখ নেই দেশে‌। নিরাশা বা ভয়ে ভুগলে মানুষ ভালো থাকতে পারে না। গত বছর রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে একটি বিষয়ে সামগ্রিকভাবে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করা হয়েছিল, যা ভারতের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে প্রযোজ্য।‌ বলা হয়েছিল, বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই তরুণ প্রজন্ম এমন অবসাদে ভুগছে। বিশেষজ্ঞর মতে, এর জন্য অনেকাংশে দায়ী সোশাল মিডিয়া।‌ দেশের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম। তারা হতাশা বা মানসিক অবসাদে ভোগায় সামগ্রিকভাবে তা দেশের ভাল থাকা বা সুখের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।

ধর্মের নামে অধর্ম, বৈরিতা, বিভাজন মানুষে-মানুষে মেলবন্ধন ও বিশ্বাসের দেওয়ালে ফাটল ধরাচ্ছে। তপ্ত ঘৃণার তরলে পুড়ছে দেশ। পুড়ছে প্রীতি, ন্যায় ও নীতি। সামাজিক ও রাজনৈতিক উদারতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, স্বাধীন মতপ্রকাশ, পোশাক ও খাদ্যাভ‌্যাস আক্রান্ত। একদিকে দারিদ্র-অভাব, অন্যদিকে হিংসা-হাহাকার দেশবাসীকে করেছে চরম অসুখী। বিপন্ন সামাজিক সম্প্রীতি। এক শ্বাসরুদ্ধকর, দমবন্ধ করা পরিবেশ চারিদিকে। হিংসা ও ভয়মুক্ত সমাজ গড়তে না-পারলে কী করে সুখী হবে দেশ! মানুষে-মানুষে মেলবন্ধন, সহমর্মিতা ও প্রীতির প্রয়োজন। বাস্তবমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে দারিদ্র, দুর্নীতি, বেকারত্ব দূর করে সকল নাগরিকের জীবনের মানোন্নয়নে শাসককে দৃষ্টি দিতে হবে। চাই সার্বিক সচেতনতা। নিজস্ব বোধবুদ্ধি, ইতিবাচক মানসিকতা দিয়ে যদি অন্তরের অন্ধকার দূর করে খুলে দিতে পারি খুশির দরজা– আমরা পৌঁছে যাব সুখী পৃথিবীর ঠিকানায়‌।

(মতামত নিজস্ব)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’-এ সুখের নিরিখে ভারত রয়েছে ১১৮ তম স্থানে।
  • সুখ-সারণিতে ভারতের স্থান দেখিয়ে দিচ্ছে– আমরা সুখী নই। সুখের নিরিখে আমরা অনেক নিচে।
  • বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের সুস্বাস্থ্য ও সম্মানের পক্ষে তা বড়ই অস্বস্তিকর। কিন্তু প্রশ্ন হল, সুখের নিরিখে দেশ এত পিছিয়ে কেন?
Advertisement