নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: শুরুটা করেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (Mahatma Gandhi)। ১৯৩০ সালে লবণের উপরে ব্রিটিশ সরকারের কর চাপানোর প্রতিবাদে গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে ৩৮৮ কিলোমিটার পদযাত্রা করে ডান্ডিতে পৌঁছেছিলেন তিনি। ইতিহাসের পাতায় যা ডান্ডি অভিযান বা লবণ সত্যাগ্রহ হিসেবেই বিখ্যাত। সেই থেকেই ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় ঢুকে পড়েছিল পদযাত্রা কর্মসূচি। যা আজকের দিনেও রাজনীতির ময়দানে সমান প্রাসঙ্গিক। পদযাত্রা কর্মসূচিকে রাজনৈতিক সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র বলেই মনে করে থাকেন অনেকে। এর কারণ দেশের রাজনৈতিক পদযাত্রার ইতিহাস ঘাঁটলে সাফল্যের খতিয়ানই উঠে আসে।
যার প্রথম উদাহরণ অবশ্যই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর (Chandra Sekhar)। ভারতের অষ্টম প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল ছিল মাত্র একবছরের কয়েক দিন বেশি। তবে, সেই সাফল্য এসেছিল পদযাত্রার হাত ধরেই। রাজনীতির ময়দানে তরুণ তুর্কি থাকাকালীন ১৯৮৩ সালে চন্দ্রশেখর ৪ হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করেছিলেন, প্রায় ছ’মাস ধরে। ১৯৮৩ সালের ৬ জানুয়ারি কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল থেকে শুরু করে সেই ‘ভারত যাত্রা’ শীর্ষক পদযাত্রা কর্মসূচি। ২৫ জুন দিল্লির রাজঘাটে সেটি শেষ হয়েছিল। চন্দ্রশেখর সেই পদযাত্রা করার সঙ্গে সঙ্গেই বিশাল রাজনৈতিক সুবিধা পাননি ঠিকই তবে পদযাত্রা কর্মসূচির কারণেই রাজনীতির ময়দানে তাঁর পরিচিতি এবং ওজন দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছিল। যা তাঁকে ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুরসি পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলে বলেই মনে করে থাকেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
[আরও পড়ুন: ঘাতক যখন পিটবুল, একে একে ১২ জনকে গুরুতর জখম করল কুকুরটি! তারপর…]
বর্তমান সময়েও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাও যে পদযাত্রা কর্মসূচিকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন তার টাটকা উদাহরণ কংগ্রেসের ভারত জোড়ো কর্মসূচি। চন্দ্রশেখরের ‘ভারত যাত্রা’র মতোই যা শুরু হতে চলেছে কন্যাকুমারী থেকে। মিল রয়েছে নামেও, কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো’ পদযাত্রা অবশ্য দেশের বারোটি রাজ্য, দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হবে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে।
পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বহু রাজনৈতিক নেতা যে মুখ্যমন্ত্রীর কুরসি অব্দি পৌঁছেছেন বা দলকে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। এমন নজির ভুরি ভূরি। শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতেই নিজের রাজ্যের মধ্যে পদযাত্রা করেই ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডি ২০০৩ সালে যে রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছিলেন তার ঠিক ১৭ বছর পরে তাঁর ছেলে জগনমোহন রেড্ডিও একইভাবে লাভবান হয়েছেন। ২০০৩ সালের ৯ এপ্রিল পদযাত্রা শুরু করেছিলেন রেড্ডি। অন্ধ্রপ্রদেশের ১১ টি জেলায় দু মাস ধরে পনেরোশো কিলোমিটার পদযাত্রা করার পরেই বছরই নতুন রাজনৈতিক দলের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সেইসময় রেড্ডির পদযাত্রার কারণে কুরসি হারান তেলগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নায়ডু। আবার সেই চন্দ্রবাবুই রাজ্যজুড়ে ১,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা করার পরের বছরই ২০১৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
[আরও পড়ুন: দেশে একদিনে করোনা আক্রান্ত ৪ হাজারের কম, ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় কমল সংক্রমণ]
আবার রেড্ডির পুত্র জগনমোহন বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে পদযাত্রা করেছিলেন। ৩৪১ দিনের সেই পদযাত্রায় সাড়ে তিন হাজারেও বেশি পথ অতিক্রম করেছিলেন তিনি। বাবার জম্মভূমি থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেছিলেন তিনি। সেই পদযাত্রার পরে ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের ১৭৫ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৫১ টিতে জয়ী হয়ে জগনই বর্তমানে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। আবার কংগ্রেস (Congress) নেতা এবং মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংয়ের (Digvijay Singh) ছ’মাসের পদযাত্রা কর্মসূচি যা নর্মদা যাত্রা নামেই পরিচিত তা ২০১৭ সালে শুরু করেছিলেন। এই সময় তিনি রাজ্যের ১১০টি বিধানসভা আসন পরিদর্শন করেন এবং জনগণের কাছ থেকে তাদের সমস্যার কথাও শুনেছিলেন। দিগ্বিজয় তাঁর যাত্রাকে ধর্মীয় যাত্রা বলেই উল্লেখ করেছিলেন ঠিকই তবে তার ঠিক পরের বছর মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের ২৩০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ১১৪ টি আসন পেয়েছিল এবং সরকার গড়তেও সমর্থ হয়েছিল। পরে অবশ্য অপারেশন কমল সেই সরকারকে ফেলেও দেয়। সেই অঙ্ক অবশ্য আলাদা। তবে, সেখানে দিগ্বিজয়ের পদযাত্রার সুফল কংগ্রেস পেয়েছিল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।