অভিরূপ দাস: তলপেটের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন দমদমের এক ব্যক্তি। আরজিকর হাসপাতালের অস্ত্রোপচার বিভাগে পেট কেটে যা বেরল তাতে চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ। আস্ত একটা ডিম! যেন এখনই সেদ্ধ করে খোসা ছাড়ানো হয়েছে।
তলপেটে সেদ্ধ ডিম এল কোত্থেকে? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হুবহু ডিমের মতো দেখতে হলেও আদতে ওটা কোনও ডিম নয়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে ‘পেরিটোনিয়াল লুজ বডি’ বা ‘অ্যাবডমিনাল মাইস’। যা থেকেই পেটে ব্যথা হচ্ছিল ওই ব্যক্তির।
ঘটনার শুরু মাস পাঁচেক আগে থেকে। প্রচন্ড পেটে ব্যথায় ভুগছিলেন দমদমের হরিহর দত্ত (নাম পরিবর্তিত)। গত বৃহস্পতিবার আরজিকর হাসপাতালে ভরতি হন বছর বাহান্নর হরিহরবাবু। হাসাপাতালের বর্হিবিভাগে দেখানোর পর তাঁকে পাঠানো হয় আলট্রাসোনোগ্রাফি বিভাগে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করে জানান, টিউমার আছে।
[আরও পড়ুন: মুকুল রায়ের বাড়িতে বারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত? সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করলেন দু’জনই]
প্রশ্ন ছিল টিউমারের অবস্থান সঠিকভাবে কোথায়? তা জানার জন্য আলট্রাসোনোগ্রাফির পর চলে সিটিস্ক্যান। দেখা যায় টিউমারের অবস্থান তলপেটে। অতএব, একমাত্র উপায় অস্ত্রোপচার। টিউমার কাটতে আরজিকর হাসপাতালের জেনারেল সার্জারির বহির্বিভাগে ভরতি হন ওই ব্যক্তি। মঙ্গলবার সকালে, অপারেশন হয়। এই অস্ত্রোপচারের শেষে টিউমার বের করতেই তাজ্জব বনে যান চিকিৎসকরা। অপারেশন টেবিলে নার্সরা চিৎকার করে ওঠেন, “সেদ্ধ ডিম পেটে।”
বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা হৃষ্টপুষ্ট এই ডিম আসলে একটা অসুখ। তঁাদের কথায়, “দেহতন্তুর সঙ্গে চর্বি, ক্যালশিয়াম জমাট বেঁধে এমন ডিমের আকার ধারণ করে। তাতেই প্রচন্ড পেটে ব্যাথা হচ্ছিল ওই ব্যক্তির।” এমন দেহতন্তু স্বাভাবিক হলেও এরকম পোলট্রির ডিমের আকারের এত বড় আকারের দেহতন্তু বিরল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কীভাবে শরীরের মধ্যে তৈরি হয় এ ধরণের ডিম্বাকৃতি অংশ? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্স গলে বা বৃহদন্ত্রের গা থেকে মাংস খসে এই ধরণের দেহতন্তু তৈরি হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুর গা থেকে ছোট টিউমার খসে এ ধরনের তন্তু তৈরি হতে পারে। তবে এমন হুবহু ডিমের মতো টিউমার আরজিকর হাসপাতালের অস্ত্রোপচার বিভাগের ইতিহাসে বিরল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।